ইদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরছিলেন । মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে কতক্ষণে দেখা করবেন সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার বাসিন্দা বিউটি বেগম শেখ । কিন্তু, দেখা আর হল কই । মুহূর্তের মধ্যেই সব শেষ । স্বামীর কাজের জন্য শিলিগুড়ি থাকতেন বিউটি । সোমবার সকাল সকাল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসেই শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা দেন । রাঙাপানি স্টেশনের কাছে পৌঁছতেই মুহূর্তে অন্ধকার হয়ে গেল সবটা । গুসকরার বাড়িতে যখন ইদ উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে, সেইসময়ই মৃত্যুসংবাদ পৌঁছল বিউটির ।
জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল বিউটির । সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্বামীর জন্য রান্না করে বেরিয়ে পড়েছিলেন । স্ত্রীকে ট্রেনে তুলতে স্টেশনে এসেছিলেন হাসমতও । তিনি জানান, কথা ছিল হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ধরার। কিন্তু, পরে তাঁরা জানতে পারেন ওই ট্রেনটি ছিল না সোমবার । তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে দেন । বলতে বলতে গলা ধরে আসে হাসমতের । তাঁর আক্ষেপ, হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনটা থাকলে স্ত্রীকে এ ভাবে হয়তো হারাতে হত না ।
তিনি আরও জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেতেই লাগাতার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলেন বিউটির সঙ্গে । কিন্তু, বারবার ফোন সুইচড অফ আসছিল । কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না স্ত্রীর । তারপর দুপুরেই জলপাইগুড়ি হাসপাতালে পৌঁছন । স্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত খুঁজেও পান । কিন্তু, সুস্থ অবস্থায় নয়, মৃতদেহের মিছিলে ।
কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে থাকেন হাসমত । স্বামীর সঙ্গে সেখানে চলে যান বিউটিও । তাঁদের দুই সন্তান । ছেলে বিশাল শেখ কর্মসূত্রে থাকেন কেরলে । মেয়ে সুনয়নী খাতুনের বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস আগে । মেয়ে জানান, 'ট্রেনে ওঠার আগে মায়ের সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল ফোনে । বলেছিল, শেষের দিকের কামরায় উঠেছে । তার পর আর যোগাযোগ করতে পারিনি।'