শান্তিপুরে মহাধুমধাম করে পুজো হয় মা আগমেশ্বরীর। এই পুজো নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। প্রায় ৪০০ বছর আগের ঘটনা। বলা হয়, অধুনা কালী মূর্তির প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তন্ত্র-শাস্ত্রে সুপন্ডিত ও তন্ত্রসাধক ছিলেন তিনি। তাঁর প্রপুত্র সার্বভৌম আগমবাগীশ শান্তিপুরে এই আরাধ্যা দেবী মহাকালীর প্রতিষ্ঠা করেন। আগমবাগীশের নামানুসারে তাঁর পূজিত কালী পরে 'আগমেশ্বরী' নামে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর রচিত 'বৃহৎ তন্ত্রসার' গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে তান্ত্রিকের নির্দিষ্ট পূজা বিধি।
পন্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রথম আগমেশ্বরীর পূজা শুরু করেন। তিনি ছিলেন নবদ্বীপের বাসিন্দা। ধ্যানযোগে আরাধ্যা দেবী 'আগমেশ্বরী'র রূপ দেখেছিলেন তিনি৷ স্বপ্নে তাঁকে দেখা দিয়ে মা বলেছিলেন, "আগামীকাল প্রত্যুষে তুই সবার আগে যাকে দেখতে পাবি, সেই তোর আরাধ্যা।" পরেরদিন চোখ মেলে কৃষ্ণানন্দ দেখেন, কালো এক কন্যা একহাতে গোবর নিয়ে অন্য হাতে ঘুটে দিচ্ছে দেওয়ালে। কৃষ্ণানন্দকে দেখে উনি লজ্জায় জিভ কেটে ফেললেন। এই রূপকেই তিনি তাঁর আরাধ্যা করেন। এই বাংলায় সেই প্রথম দক্ষিণা কালীর মূর্তি তৈরি হয়।
পরবর্তীকালে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের প্রপুত্র সার্বভৌম আগমবাগীশ শান্তিপুরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁরা ছিলেন শাক্ত। কিন্তু শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্যের পুত্র মথুরেশ গোস্বামী চেয়েছিলেন তদানীন্তনকালে শাক্ত এবং বৈষ্ণবের মধ্যে বিরোধ দূর করতে। তাই তিনি তার মেয়ের বিয়ে দেন সার্বভৌম আগমবাগীশের সঙ্গে। পরে শান্তিপুরেই আগমেশ্বরীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
আরও পড়ুন: সম্প্রীতির পুজো, চৌরঙ্গী ক্লাবের কালীপুজোর আয়োজন করেন হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায় মিলে
সার্বভৌমের নিয়মানুযায়ী একদিনে বাড়িতেই কালী মূর্তি তৈরি করা হত। কিন্তু এখন মূর্তি অনেক বড় হওয়ায় কৃষ্ণপক্ষ পরার পর মূর্তির কাজ শুরু হয়। ৮-১০ দিনের মধ্যে মায়ের মূর্তি তৈরি হয়। মৃৎশিল্পী সুবীর পাল চক্ষু দান করে নীচে নামলে পুজো শুরু হয়। পুজো শেষের সঙ্গে সঙ্গেই ঘটও বিসর্জন করা হয়।
শান্তিপুর তথা বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেকে ভক্তরা আসেন তাঁদের দেবী দর্শন করে মনস্কামনা পূর্ণ করতে। দেবীকে নানান দহরনের সোনার অলংকার টাকা-পয়সা মিষ্টি বাতাসা ভক্তরা দিয়ে যান। প্রতিবছর এই পুজোর পিছনে খরচ হয় প্রায় ১০-১২ লাখ টাকা। মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় অধিকারী জানান, "আমি দীর্ঘ ৪০ থেকে ৪৫ বছর মায়ের মন্দির দেখাশোনা করি। করোনা আবহে দু'বছর ভোগ হয়নি। এ বছর নতুন করে আবার ভোগ চালু হচ্ছে। "