শুট আউট অ্যাট মালদহ। ফারাক কতদিনের ? হাতের কর গুনলে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১২ দিনের। শুধু গুলির আওয়াজ গৌড়বঙ্গের আকাশ-বাতাসে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি উত্তরবঙ্গের এই জেলা মির্জাপুর হয়ে গেল ?
আম ও আমসত্ত্ব। বড় ভাল এই জেলার। গত কয়েক বছরে তাই যখনই এই জেলায় এসেছেন তৃণমূল নেত্রী, ততবার আম ও আমসত্ত্বের প্রশংসা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বিধানসভা ভোটে এই দুটোই তৃণমূল কংগ্রেসকে ভরিয়ে দিয়েছিল মালদহ। জেলার ১২টি আসনের মধ্যে আটটি জিতেছিল রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে আম ও আমসত্ত্ব হাতছাড়া হয়েছে তাদের।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে হাওয়া গরম মালদহে। পটাপট করে খালি গুলির আওয়াজ। কখনও ইংরেজবাজারে তো কখনও কালিয়াচক। মাত্র ১২ দিনের মধ্যে যেন জেলার দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের ছবিটা আরও প্রকট হয়ে গিয়েছে। তবে এই ১২ দিন নয়। যদি মালদহের ভূগোল ঘাঁটা যায়, তাহলে দেখা যাবে, উত্তরবঙ্গের এই জেলার সঙ্গে একটা দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। সঙ্গে রয়েছে বিহার-ঝাড়খণ্ডের মতো সীমানা রাজ্য।
গত ১২ দিনে কী ঘটল এই জেলায়, একবার চট করে দেখে নেওয়া যাক। ১২ দিনের ব্যবধানে পর পর দুটো শুট আউট। নিশানায় দুই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। প্রথম ঘটনা ইংরেজবাজার পুর-এলাকায়। খুন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দুলাল সরকার। দোকানের মধ্যে ঢুকে কাউন্সিলরকে গুলি দুষ্কৃতীদের। ঘটনায় এক তৃণমূল নেতা-সহ গ্রেফতার একাধিক।
১২ দিনের মধ্যে ফের শুটআউট মালদহে। এবার কালিয়াচক ব্লকের যদুপাড়া এলাকায়। টার্গেট করা হয় অঞ্চল প্রধান বকুল শেখকে। দুষ্কৃতী গুলিতে মৃত্যু হাসান নামের তৃণমূল কর্মী। নাম উঠল জাকির নামের আর এক তৃণমূল নেতার। কে এই জাকির ? কী ভাবে তৃণমূলে যোগ ?
১৫ দিন আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে জাকির। কালিয়াচকের ঘটনায় গ্রেফতার এক দুষ্কৃতী। কালিয়াচকের ঘটনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। এই তো গেল দুটি ঘটনার পর শাসকের অন্দরে রাজনৈতিক চাপান-উতোরের ছবি। কারণ, উত্তরবঙ্গের এই জেলায় পুরসভা, বিধানসভা জেতার পরেও নাকি এখন তৃণমূলের পায়ের নিচে জমি এখনও শক্ত হয়নি।
রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে এই জেলায় বেড়েছে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য। জেলা পুলিশের একাংশ থেকেও এই খবরের সতত্যা স্বীকার করা হয়েছে। এমনিতেই পাস দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত যাওয়ার ফলে মালদহকে বলা হয় জাল টাকার এপিসেন্টার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জেলা পুলিশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বেআইনি অস্ত্র।
গোয়েন্দাদের দাবি, এই অস্ত্রের অনেকটাই আসছে বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে। কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না বাংলাদেশ দিয়ে ঢোকার সম্ভাবনাকেও। গোয়াদের একাংশের দাবি, জাল টাকার সঙ্গেই বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে এই জেলায় চলে আসছে অস্ত্র। যা মূলত কালিয়াচক দিক এসে, চলে যাচ্ছে মালদহের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে বৈষ্ণবনগর, মোতাবাড়ির মতো প্রান্তিক এলাকায় পৌঁচ্ছে যাচ্ছে সেই অস্ত্র।
সম্প্রতি নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশকে নজরদারি বাড়াতে। প্রয়োজনে সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করে কাজ করতে। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, দুলাল সরকারের মতো তৃণমূলের বিশ্বস্ত কর্মীদের এই জেলায় তিনি হারাতে চান না। চান না কোনও ভাবে আমের শহরে বারুদের গন্ধ শুকতে।