রাজ্য প্রশাসন ও জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে 'সেতুবন্ধন'-এ উদ্যোগী বিদ্বজ্জনেরা । রবিবার সকালে দুই পক্ষকেই ইমেইল করেছেন অপর্ণা সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়রা । ইমেইলে দ্রুত সমস্যা সমাধানে দুই পক্ষকেই বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তাঁরা । জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন অপর্ণা সেনরা । অন্যদিকে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বিদ্বজনদের অনুরোধ, অনশনরত চিকিৎসকদের বক্তব্য শুনে, তাঁদের দাবি পূরণে যেন সচেষ্ট হয় । তাঁরা চাইছেন দুই পক্ষই যেন আবার আলোচনায় বসেন । আলোচনায় রাজ্য ও জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে মধ্যস্থতার বিষয়ে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা । ইমেইলে তাঁরা জানিয়েছেন, দুই পক্ষ চাইলে তাঁরা মধ্যস্থতায় রাজি ।
টানা ৯ দিন । ধর্মতলায় অনশন চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের । অসুস্থ হয়ে পড়ছেন একের পর এক অনশনকারী । হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁদের । বাকিদের শারীরিক পরিস্থিতিরও ক্রমশ অবনতি হচ্ছে বলে খবর । এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাগরিক সমাজের তরফে স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ইমেল পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টকে । ইমেল-এ সাক্ষর রয়েছে অপর্ণা সেন, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, সিলেবাস কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেনদের ।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি ইমেলে বার্তা
ইমেলে অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নাগরিক সমাজ । অনশন প্রত্যাহারের আর্জি করেছেন তাঁরা । ইমেলে বার্তা, 'অনশনরত চিকিৎসক-বন্ধুদের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ, নাগরিক সমাজের এই সক্রিয়তায় আস্থা রেখে, আপনারা অনশন প্রত্যাহার করুন।'
রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বক্তব্য
ইমেলে রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশে অপর্ণা সেনরা লেখেন, 'অনশনরত চিকিৎসকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে তাঁদের বক্তব্য শুনুন এবং তাঁদের দাবিপূরণের জন্য সততার সঙ্গে সচেষ্ট হন।' একইসঙ্গে লেখা হয়েছে, "সরকার চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবির ন্যায্যতা স্বীকার করা সত্ত্বেও, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে যে সংশয় এবং নিরাপত্তাহীনতা আন্দোলনরত ডাক্তারদের অনশনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে, সেই আর্জি ডাক্তারদের একার নয়, বৃহত্তর নাগরিক সমাজেরও।"
সেতুবন্ধনের ইমেল
দুই পক্ষের মধ্যে 'নতুন সংলাপের সেতু' গড়ে তুলতে চেয়েছেন বিদ্বজ্জনেরা । অপর্ণা সেনরা লেখেন, "প্রশাসন এবং আন্দোলনরত চিকিৎসক সমাজ, উভয় পক্ষকে জানাতে চাই, এই সমস্যা নিরসনে, দু’পক্ষের মধ্যে একটি নতুন সংলাপের সেতু গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে কি না সেটা যদি জানান, তা হলে আমরা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারি।"
পুজোর আগে থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ১০ দফা দাবি নিয়ে তাঁরা অনশন করছেন। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যভবনে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক হয় জুনিয়র ডাক্তারদের। এরপর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জুনিয়র ডাক্তারদের স্ট্যাটাস রিপোর্ট পাঠান। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, সরকার কতটা কাজ এগিয়েছে, জানানো হয় জুনিয়র ডাক্তারদের।
এদিকে, অনশনের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন একের পর এক জুনিয়র ডাক্তার । ধর্মতলার অনশন মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। আরজি কর হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয় তাঁকে । উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে অনশনরত অলোক বর্মাও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । এদিকে, সিসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়কে । শনিবার রাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। সিসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে অনুষ্টুপকে। তাঁর শরীরের ভিতরে কোথাও রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে অনুমান চিকিৎসকদের।