দরজায় কড়া নাড়ছে দীপাবলি। মা কালীর বিভিন্ন রূপের পুজো হয় সারা বাংলা জুড়েই৷ উত্তর ২৪ পরগনার সদর শহর বারাসতে ধুমধাম করে কালী পুজো হয়। শহরকে কেন্দ্র করে রয়েছে বহু পুরনো স্থাপত্য। বারাসত চাঁপাডালি থেকে কাজীপাড়া পেরিয়ে নদীভাগ হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পার হলেই দেখা মিলবে এক জরাজীর্ণ ডাকাত কালী বাড়ির৷ কথিত রয়েছে, জরাজীর্ণ ভগ্নপ্রায় এই মন্দিরটির বয়স প্রায় ৫০০ বছর, কেউ বা বলেন ৩০০ বছর। রঘু ডাকাতের এই কালী মন্দির নিয়ে রয়েছে অসংখ্য জনশ্রুতি।
জাগ্রত এই কালিবাড়িকে ঘিরে আছে বহু জনশ্রুতি ও মানুষের ব্যাক্তিগত অভিমত। এই ডাকাত কালিবাড়িতে কোনও মূর্তি পূজা হয় না।একসময় ঘন জঞ্জলে ঘেরা ছিল গোটা এলাকা। আর সেই সময় ডাকাতদের বিচরণক্ষেত্র ছিল এই অঞ্চল। কথিত রয়েছে রঘু ডাকাত এবং তার ভাই বিধু, ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মন্দিরে মায়ের আরাধনা সারতেন নিষ্ঠাভরে। কিন্তু তার পরেও ধরা পড়ে যাওয়ায় ক্ষোভে অভিমানে মায়ের মূর্তি তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেলে রঘু ডাকাত। পরে বাসুদেবের একটি মূর্তি ছিল সেটিও চুরি যাওয়ায় আর এই মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠার সাহস কেউ দেখায়নি।
এই মন্দির নিয়ে নানা অলৌকিক গল্প শোনা যায় লোকমুখে। এখানে একসময় নরবলির ও প্রচলন ছিল। একসময় এখানে অষ্টধাতুর প্রতিমাকে কালিরূপে পুজো করত রঘুডাকাত। ডাকাতি করার আগে নরবলি দিয়ে পাশের পুকুরে ভাসিয়ে দিত সে। আজও মন্দিরের পাশে রয়েছে সেই পুকুরটি। মন্দিরের মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে গাছের শিকড়ে দেখা যায় একটি হাতের ছাপের মত অবয়ব। গাছের যে অংশকে কালী রূপে পুজো করা হয় সেটিও মানব দেহের নিম্নাংশের মত দেখতে, নাভীর চিহ্ন সুস্পষ্ট। স্থানীয়দের মতে যতদিন যাচ্ছে হাতের ছাপ ও নাভীর চিহ্ন আরও গাঢ় হচ্ছে।
সম্প্রতি পুরসভার তরফে মন্দিরের কিছু অংশ বাধিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূর্তিহীন এই কালী মন্দির আগলে রেখেছেন স্থানীয়রাও। তাদের বিশ্বাস, 'মা তাঁর সন্তানদের নাকি খালি হাতে ফেরান না।'