এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ, তবু রঙ্গে ভরা। শুধু আলুরদমের জন্য একটা আস্ত মেলা! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও বর্ণে বর্ণে সত্যি। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের সিংটি গ্রামে 'ভাই খাঁ' মেলার প্রধান আকর্ষণ হল আলুরদম ও মুড়ি। ধামা করে মুড়ি ও নতুন আলু নিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। অনেকে বাড়ি থেকে রেঁধে আনেন আলুরদম। অনেকে রান্না করেন মেলাপ্রাঙ্গণেই। প্রতি কেজি ২৫ বা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয় আলুরদম। প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম দিনে খাঁ পাড়ার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বসে ৫০০ বছরেরও প্রাচীন এই মেলা। একের পর এক সারিবদ্ধ আলুরদমের দোকান। মুড়ি দিয়ে আলুরদম খাওয়া অসংখ্য মানুষ। বাংলার নিজস্ব স্থানীয় উৎসব।
আলুরদম ছাড়াও এই মেলার আরেক আকর্ষণ কাঁকড়া। মেলায় ৩০০ বা ৪০০ গ্রাম ওজনের একেকটা কাঁকড়া বিক্রি হয়৷ বিক্রেতারা কেউ আসেন ক্যানিং থেকে, কেউ কাকদ্বীপ বা হাসনাবাদ থেকে। অন্য সব মেলা যেমন কয়েকদিন ধরে চলে, এই মেলা কিন্তু তেমন নয়। মাত্র একদিনের মেলা। পয়লা মাঘ শুরু, সেদিনই শেষ।
Anik Dutta: হাসপাতাল থেকে ছুটি, তবে এখনও চাঙ্গা নন, নিজেই পোস্ট করলেন অনীক দত্ত
এই মেলার শুরুর পিছনে রয়েছে এক গল্প৷ তার কতটা সত্যি আর কতটা কল্পনা, এখন আর আলাদা করা অসম্ভব। প্রচলিত আছে, ৭০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে সিংটি গ্রামে আসেন এক পীর। তাঁর আসল নাম জানা যায় না৷ গ্রামের এককোণে থাকতেন তিনি৷ ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বড্ড ভালোবাসতেন। বাচ্চারা তাঁকে 'ভাই খাঁ' বলে ডাকত৷ মানুষজন বিশ্বাস করতেন ওই পীরের অলৌকিক ক্ষমতা ছিল।
এই ভাই খাঁ পীরের মৃত্যু হয় তিরিশে পৌষ। তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় পয়লা মাঘ৷ শোনা যায়, লক্ষাধিক মানুষ এসেছিলেন শেষকৃত্যে। মেলা বসে গিয়েছিল প্রায়৷ তখন থেকেই প্রতি বছর এই মেলা বসে। অসংখ্য মানুষ আসেন৷ ভাই খাঁ পীরের মাজার দর্শন করেন
এই এলাকা আলু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। হয়তো সেই কারণেই মেলায় আলুরদমই প্রধান আকর্ষণ। তবে কাঁকড়া বিক্রির কারণ একেবারেই অজানা।