২০২৫ সালে বড়পর্দায় দেবের উপহার ‘রঘু ডাকাত’, তাঁরই প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই ছবির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এর আগে দেব-ধ্রুব জুটি তৈরি করেছিলেন গোলন্দাজ। দু বছর আগে পুজোয় এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল। টলিউডের প্রথম ছবি হিসাবে নাকি কোটির ঘরে ব্যবসাও করেছিল। কলকাতা ফুটবলের প্রতিষ্ঠাতা নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন দেব।
একের পর এক নতুন রকমের চরিত্রে নিজেকে ভাঙছেন তিনি। এবার বাংলার দুঃসাহসী রঘু ডাকাতের গল্প নিয়ে পর্দায় ফিরছেন বাংলার সুপারস্টার। সেই আইকনিক চরিত্রে অভিনয় করবেন দেব নিজে। সারা জাগানো এই খবরটি দেওয়ার জন্য দীপান্বিতা অমবস্যার দিনটাকেই বেছে নিয়েছেন ছবি নির্মাতারা। রঘু ডাকাত এর পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন স্বয়ং দেব এবং এসভিএফ।
গোলন্দাজের সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই, এত বড় প্রোজেক্ট ঘোষণা, বাংলা ছবির জন্য নিঃসন্দেহে দারুণ খবর। শোনা যাচ্ছে, এটিই বাংলার বিগ বাজেটের ছবি। কেন একজন ডাকাতের গল্পকেই বেছে নেওয়া হল বড়পর্দার জন্য?
কেন রঘু ডাকাতের কাহিনি বড় পর্দায়?
নীলকর সাহেব থেকে শুরু করে ইংরেজ, জমিদারদের ত্রাস ছিলেন তিনি। কিন্তু গরিবদের কাছে তিনি ছিলেন রবিন হুড। রঘু ডাকাত পর্দায় ডানা মেলার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক কে ছিলেন এই রঘু ডাকাত? তাঁকে নিয়ে কথিত রয়েছে অসংখ্য কাহিনি। রচিত হয়েছে বই-ও। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক কে এই রঘু ডাকাত, যার চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরবেন দেব। তাঁর জীবনের গল্প সত্যিই সিনেমার থেকে কম কিছু নয়। (face)
কে ছিলেন রঘু ডাকাত?
শোনা যায়, তাঁর নাম কাঁপত মধ্যযুগের ইউরোপ। কিন্তু তাঁর জীবনাবসান হয়েছিল একজন কালী সাধক হিসেবেই। তাঁর শত্রু ছিল জমিদার, শোষকরা। তাঁর ত্রাসে কাঁপত সেসময়ের ইংরেজ পুলিশরাও। ভেক ধরাতে সে ছিল পারদর্শী।
ইতিহাস মিলে মিশে রয়েছে তাঁর জীবনের সঙ্গে। তাই তাঁর জীবনে আলো ফেলতে হলে কিছুটা ভরসা করতেই হবে সেযুগের জনশ্রুতির উপরে। লুকিয়ে সিঁধ কেটে চুরি করা নয়, বরং রঘু আগেভাগবে জানিয়েই করতেন লুঠ। রক্তে লেখা চিঠি পাঠিয়ে সময় জানিয়ে দেওয়া হত। তারপরেও তাঁকে ধরা ছিল অসাধ্য।
তথ্য প্রমাণ বলছে রঘুর জন্ম অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে। তিনি জন্মেছিলেন অবিভক্ত বাংলাদেশের এক কৃষক পরিবারে। তাঁর নাম রঘু ঘোষ। ডানপিটে এই ছেলে ছোট থেকেই সাক্ষী ব্রিটিশদের অত্যাচারের। (সুতানুটি, গোবিন্দপুর, কলিকাতায় তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি। গরিব, নিরীহ চাষিদের বাধ্যতামূলকভাবে করানো হত নীল চাষ। আর নীল ফলানো জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সেসব কানে নিতেন না নীল সাহেবরা। বরং নীল চাষে রাজি না হলে পেয়াদা পাঠিয়ে সেই কৃষকদের তুলে আনা হত।
শোনা যায়, রঘু ঘোষের বাবাও ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক। নীল চাষে রাজি না হওয়ায় তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাহেব কুঠিতে, নৃশংস অত্যাচারের পর তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল গ্রামেরই এক গাছের সঙ্গে। এরপর থেকেই রঘুর প্রতিশোধ স্পৃহা চাগাড় দিয়ে ওঠে। তিনি ঠিক করে নেন এর প্রতিশোধ তিনি নেবেনই। তাঁর নেতৃত্বে গ্রামের দামাল ছেলেদের নিয়ে তৈরি হল লাঠিয়াল বাহিনী। যাঁদের প্ৰথম কাজই ছিল নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এরপর একেরপর এক নীলকর সাহেবদের বাড়িতে হামলা চালাতে শুরু করে রঘু ও তাঁর দলবল।
শাসকের ত্রাস, গরিবের রবিনহুড, কালীর পূজারী:
রঘু ডাকাতের একই অঙ্গে যেন ছিল তিনটি রূপ। শাসক ব্রিটিশদের কাছে তিনি ছিলেন যম। কিন্তু ওই লুঠ করা টাকা রঘু বিলিয়ে দিতেন গরিব দুদর্দশাগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে। সাধারণ মানুষের মধ্যে দিন দিন বাড়ছিল রঘু ডাকাতের জনপ্রিয়তা। বাড়ছিল শক্তিও। হাজার চেষ্টা করেও কোনও পুলিশ, ইংরেজরা তাঁর টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। ধীরে ধীরে এই কারণে রঘুর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ,তিনি হয়ে ওঠেন গরিবের মসিহা।
তবে এই জায়গায় গিয়ে রঘু ছিলেন শিশুসম। তাঁর আরাধ্য দেবী ছিলেন মা কালী। অমাবস্যার রাতে ভক্তি সহকারে কালী পুজো করে, সিঁদুর আর বলির রক্ত মেশা তিলক পরে তবেই লুঠপাটের বের হতেন তাঁরা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত একাধিক কালী মন্দির আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলার বুকে। সেখানে চালু ছিল নরবলির প্রথাও। তবে একবার খোদ রামপ্রসাদকে তিনি মাকালীর সামনে বলি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। পরে নিজের ভুল বুঝতে পারেন রঘু। তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন স্বয়ং মা কালী। তারপর থেকেই সংকল্প করে ডাকাতি এবং নরবলি বন্ধ করেছিলেন রঘু। জানা যায়, পরবর্তী জীবন তিনি একজন কালী সাধক হিসেবেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন।