লগ যা গলে
কি ফির ইয়ে হাসিন রাত হো না হো
শায়েদ ইস জনম মে মুলাকাত হো না হো
সত্যি আর মুলাকাত হবে না । 'ওহ কৌন থি' সিনেমার গানের কথাগুলো আজ তাঁর জীবনে সত্যি হয়ে গেল । প্রয়াত হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের ভারত কুমার । ছেড়ে গেলেন 'রোটি কাপড়া মাকান'। সংবাদসংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ মুম্বইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মনোজ কুমার । হাসপাতাল সূত্রে খবর, 'সিরোসিস অফ লিভার'-এ ভুগছিলেন । বর্ষীয়ান অভিনেতার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বলিউড । শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।
আসল নাম হরিকৃষ্ণ গোস্বামী । গ্ল্যামার জগতে এসে বহু তারকাই নাম পরিবর্তন করেছেন । তবে, মনোজ কুমারের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা । অভিনেতার নাম পরিবর্তনেরও একটা ছোট গল্প রয়েছে । আসলে শবনম সিনেমায় দিলীপ কুমারের চরিত্রের নাম মনোজ কুমার । ওই সিনেমা দেখার পর দিলীপ কুমারকে নিজের আইডল হিসেবে মানতে শুরু করেন । তারপর নিজের নাম পরিবর্তন করে হরিকৃষ্ণ থেকে হয়ে উঠলেন মনোজ কুমার ।
১৯৩৭ সালে অবিভক্ত ভারত তথা অধুনা পাকিস্তানে জন্ম মনোজ কুমারের । মাত্র ২০ বছর বয়সে ডেবিউ করেন বলিউডে । প্রথম সিনেমা 'ফ্যাশন'। আর নায়ক হিসেবে মনোজের প্রথম সিনেমা কাঁচ কি গুড়িয়া । তবে, প্রথম সাফল্য আসে হরিয়ালি অউর রাস্তা সিনেমায় মালা সিনহার বিপরীতে । তারপর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি । উপকার (১৯৬৭),
গুমনাম (১৯৬৫),শহিদ (১৯৬৫),ও কৌন থি ? (১৯৬৪) থেকে ক্রান্তি (১৯৮১), রোটি কাপড়া অউর মাকান (১৯৭৪) ব্যাপক সাফল্য পায় বক্স অফিসে ।
শুধু অভিনেতা নয়, পরিচালক হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় মনোজ কুমার । ১৯৭৫ সালে ‘রোটি কাপড়া অউর মাকান’ সিনেমার জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান । এছাড়াও, মনোজ কুমারের ঝুলিতে ' দাদাসাহেব ফালকে','পদ্মশ্রী'-র মতো সম্মান রয়েছে ।
ভারত কুমারের নামেও কিন্তু পরিচিত তিনি । আসলে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী অভিনেতাকে 'জয় জওয়ান জয় কিষাণ' স্লোগানের উপর ভিত্তি করে একটি সিনেমা তৈরি করার অনুরোধ করেন । তারপরই মনোজ বানিয়ে ফেলেন উপকার সিনেমা । বক্সঅফিসে হিট । সিনেমার গানগুলি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো । স্বাধীনতা দিবস হোক বা প্রজাতন্ত্র, আজও ‘মেরে দেশ কি ধরতি' বেজে ওঠে সব জায়গায় । জানেন, দেশাত্মবোধক সিনেমা তৈরি করার জন্য নিজের বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলেন পরিচালক । তাঁর এই দেশপ্রেম মনোজকে নতুন নাম দিল ভারত কুমার ।
পরবর্তী জীবনে রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন মনোজ কুমার । ২০০৪ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি । বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা, মিছিলেও দেখা গিয়েছে তাঁকে ।
জানা গিয়েছে, বহুদিন ধরে বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন মনোজ । শেষ দিকে নাকি খুবই যন্ত্রণায় কাটিয়েছেন অভিনেতা । মনোজ পুত্র কুণাল এএনআই-কে জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন । কিন্তু অত্যন্ত মনের জোরের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন । সবসময়ই খুব হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসতেন । বেঁচে থাকলে আর দু’মাসের মধ্যে বাবার বয়স হত ৮৮ ।
মনোজ কুমারের প্রয়াণ শোকপ্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদি লেখেন, 'কিংবদন্তি অভিনেতা এবং চিত্রপরিচালক শ্রী মনোজ কুমারের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত । মনোজ কুমার ভারতীয় ছবির একজন আইকন ছিলেন । তিনি মূলত তাঁর দেশাত্মবোধক ছবির জন্য, দেশাত্মবোধের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। মনোজ জির কাজ ভারতকে গর্বিত করেছে । রাজনাথ সিংও অভিনেতার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনকে সমবেদনা জানিয়েছেন । রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও শোকপ্রকাশ করেছেন । বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও শোকপ্রকাশ করেছেন । এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, 'প্রবীণ অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মনোজ কুমারের মৃত্যুতে আমি শোকাহত। দেশাত্মবোধক চলচ্চিত্রের জন্য তাঁকে ‘ভারত কুমার’ও বলা হত, তাঁর মাতৃভূমির প্রতি যে ভালোবাসা তা তিনি ছবিতে ফুটিয়ে তুলতেন।' অন্যদিকে, বলিউডের অক্ষয় কুমার, জ্যাকি শ্রফ থেকে করণ জোহর, মধুর ভান্ডারকররাও শোকপ্রকাশ করেছেন ।