মঞ্চের প্রতি তাঁর আকর্ষণ কৈশোর জীবন থেকেই । প্রথম দিকে ইংরেজি থিয়েটার করতেন । সেখান থেকেই তৈরি করলেন থিয়েটার গ্রুপ `দ্য শেক্সপিয়ারিয়ান্স`। পরে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'লিটল থিয়েটার গ্রুপ' । ইংরেজি নাটকের পাশাপাশি মঞ্চস্থ হতে শুরু হল বাংলা নাটক । রাজনীতির আদর্শ ও থিয়েটারকে একই সূত্রে বাঁধলেন তিনি । তিনি উৎপল দত্ত (Utpal Dutt) । আজ বাংলার গণনাট্য আন্দোলনের পুরোধা উৎপল দত্তের জন্মদিন (Utpal Dutt birthday) ।
বঙ্গ থিয়েটার উৎপল দত্তের হাত ধরে পেয়েছিল এক নতুন দিশা । নাটকের জন্য স্কুলে শিক্ষতার চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন । উৎপল দত্ত গণনাট্য সংঘেও যোগ দিয়েছিলেন । কিন্তু সে সম্পর্ক মাত্র আট (মতান্তরে দশ) মাস স্থায়ী হয়েছিল । গণনাট্যের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আরও অনেকের মতো বিরক্ত হয়ে তিনিও বেরিয়ে এসেছিলেন । কিন্তু গণনাট্যই তাঁকে শিল্পে সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রথম পাঠ শিখিয়েছিল । মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অসীম দায়বদ্ধতা । ১৯৫২ সালে ‘পাসপোর্ট’ থেকে ১৯৯২ সালে ‘সত্তরের দশক’ পর্যন্ত দীর্ঘ একচল্লিশ বছরে উৎপল দত্ত মোট ২৫টি পথনাটক করেছিলেন কখনও কোনও কারখানার গেটে, নির্বাচনী জনসভায় বা বন্দিমুক্তি আন্দোলনে উত্তাল বাংলার বিভিন্ন মাঠে ময়দানে ।
১৯৬৫ সালের ২৮ মার্চ মঞ্চস্থ হয়েছিল আর এক সাড়া জাগানো নাটক ‘কল্লোল’। ১৯৪৬-এর নৌ-বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে এই নাটক বিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশকে যে অভূতপূর্ব গণআন্দোলনের সূচনা করেছিল, তা আজও নজিরবিহীন । ১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ভারত রক্ষা আইনে উৎপল দত্তকে গ্রেফতার করে জেলবন্দি করা হয় । তাঁর মুক্তির দাবিতে দেশ ও আন্তর্জাতিক স্তরে সরব হয়েছিলেন শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা। কলকাতার রাস্তায় মিছিল বেরিয়েছিল ।
থিয়েটারের জন্য বহুবার জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে । নাট্যদল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু, লড়াই ছাড়েননি । তাঁর হাতেই তৈরি হয়েছে টিনের তলোয়ার, ফেরারী ফৌজ, বনিকের রাজদন্ড, দাঁড়াও পথিকবর, ব্যারিকেড, মীরকাশিম, ছায়ানট-এর মতো বিখ্যাত নাটক । তাঁর ইংরেজি নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেগোর, গোর্কি অ্যান্ড কন্সট্যান্টাইন সিমোনের ইত্যাদি ।
থিয়েটারের পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্র জগতেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য । বাংলা, হিন্দি মিলিয়ে বহু সিনেমা করেছেন । কৌতুক অভিনয় হোক কিংবা খলনায়কের চরিত্র, সব ক্ষেত্রেই তিনি সাবলীল । কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ফিল্ম ফেয়ার সম্মানে ভূষিত হন । উৎপল দত্ত অভিনীত সিনেমাগুলির মধ্যে জয় বাবা ফেলুনাথ, হিরক রাজার দেশে, পদ্মা নদীর মাঝি, আগন্তুক দর্শকের কাছে চিরস্মরণীয় । হিন্দি সিনেমাতেও দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন । 'সাত হিন্দুস্তানী' সিনেমায় তিনি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন । তাঁর অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হিন্দি সিনেমা হল 'গুড্ডি', 'অমানুষ', 'বরষাত কি এক রাত' ইত্যাদি । গোলমাল ছবিতে তাঁর অভিনয় নিয়ে আজও অমর হয়ে রয়েছে।
উৎপল দত্ত মার্কসবাদী চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন । ভারতীয় কমিউনিস্ট মার্ক্সবাদী পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন । তাই তাঁর একাধিক নাটকে বামপন্থী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছে । জন্মদিনে বিখ্যাত নাট্যকার উৎপল দত্তের প্রতি এডিটরজি বাংলার পক্ষ থেকে রইল সশ্রদ্ধ প্রণাম ।