পতৌদিদের প্রাসাদে ঢুকে সোজা নবাবের উপর হামলা, এমন বুকের পাটা কার আছে? সেই ভেবেই শিউরে উঠছিল মায়ানগরী। নাটকীয় সেই রাতের ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ নামের এক যুবককে। সইফের হামলাকারীর সঙ্গে যোগ রয়েছে বাংলাদেশের প্রাথমিক ভাবে এই দাবি মুম্বই পুলিশের।
কে এই শরিফুল?
মুম্বই পুলিশ সূত্রে খবর, বছর ৩০-এর মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ বাংলাদেশের বাসিন্দা। ধৃত শরিফুল পরিচয় পত্র জাল করে, ভারতে ঢুকেছিল। বারবার নাম বদলিয়ে সে ভারতে বসবাস শুরু করে। ভারতে ঢোকার পর নাম বদলে বিজয় দাস রেখেছিল ওই অভিযুক্ত। এছাড়াও কোনও জায়গায় সে মোহম্মদ ইলিয়াস, কোথাও সে বিজে নামে পরিচিত। ভারতে এসে বিভিন্ন সংস্থায় কাজে নিযুক্ত ছিল সে. মুম্বইয়ের থানে এবং ওরলি এলাকার দুটি পাব এবং হোটেলে বেশ কিছুদিন চাকরিও করেছিল। ওরলি এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় চুরির অভিযোগে কাজ যায়। এই খবর ও জানতে পেরেছে পুলিশ।
আগে থেকেই সারা ছিল রেইকি:
মুম্বইয়ের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, এর আগেও সইফের বাড়িতে ঢুকেছিল শরিফুল। বাড়ি পরিষ্কার করার কাজ নিয়ে আগেই একবার নাকি সে পতৌদিদের বাড়িতে ঢুকেছিল। সইফদের গৃহ পরিচারক হরির মারফৎ নাকি এই কাজে নিযুক্ত হয়েছিল সে। যদিও ক্রাইম ব্রাঞ্চ এই তথ্যকে মানতে চাইছে না। তাঁদের দাবি, অভিযুক্ত আগেও সইফের বাড়িতে ঢুকেছিলেন এমন কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি।
সেই রাতে ঠিক কীভাবে বাড়িতে ঢুকেছিলেন ধৃত শরিফুল?
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৬ জানুয়ারি রাত ২টো নাগাদ বান্দ্রায় সইফের বাড়িতে প্রথমে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ঢুকেছিল আততায়ী। যখন তিনি সইফিনার বাড়িতে ঢোকে, তখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই সুযোগেই ১১তলায় উঠে যায় সে এবং ফায়ার এক্সিটের ডাক্ট শ্যাফট দিয়ে সোজা ঢুকে পড়ে নবাবের বাড়ির অন্দরে। এরপর সে সইফের ছেলে জেহ-এর ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বাথরুমে লুকিয়ে ছিল।
কোন ছকে মুম্বই পুলিশের জালে ধরা পড়ল শরিফুল?
সইফের হামলাকারী সন্দেহে প্রথমে দুই ব্যক্তিকে ভুল আটক করে পুলিশ। শেষে তৃতীয়বারের চেষ্টায় ধরা পড়ে শরিফুল। তাঁকে ধরতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল মুম্বই পুলিশের। চিরাচরিত পুরনো পদ্ধতির পাশাপাশি, সইফের হামলাকারীকে ধরতে নানা প্রযুক্তির ব্যবহারও করেছে পুলিশ। ব্যবহার করা হয়েছে, 'ফেস রেকগনাইজেশন সিস্টেম'।
সইফের হামলাকারীকে ধরার জন্য, পুলিশের হাতে ছিল সিসিটিভি ফুটেজ। সেই ফুটেজের ভিত্তিতেই চিহ্নিতকরণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক সিস্টেম। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া অভিযুক্তের ছবি মুম্বই ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় পোস্টার আকারে ছড়ানো হয়। সইফের উপর হামলার পরেই শহরের নির্দিষ্ট কিছু জনবহুল এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। একটি বিশেষ দল গঠন করে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ফেস স্ক্যান করা হয়।
এই পদ্ধতিতেই, ৯ জানুয়ারির একটি ফুটেজের সঙ্গে সইফের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজের ব্যক্তির মিল পায় মুম্বই পুলিশ। আর এই ছিল তাঁদের তদন্তের সবচেয়ে বড় সূত্র। ওই ফুটেজ থেকে বাইকের নম্বর নোট করে পুলিশ। সেই বাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে শুরু হয় তল্লাশি। এর মধ্যেই, ঘটনার পর অভিযুক্তকে আবার দেখা যায় দাদর রেল স্টেশনের বাইরে। সেই সূত্র ধরে, পুলিশ পৌঁছয় এক শ্রমিক বস্তি এলাকায়। সেখানে এক ঠিকাদারের থেকে মেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি। কোথায় গেলে পাওয়া যাবে শরিফুলকে। এরপরেই হয় দুইয়ে দুইয়ে চার। থানেতে জঙ্গল ঘেরা এলাকায় একটি শ্রমিক বস্তিতে গা ঢাকা দিয়েছিলেন শরিফুল, সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ।
রবিবার শরিফুলকে কড়া পুলিশি পাহাড়ায় বান্দ্রা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পেশ করা হয়। জেরার মুখে অবশেষে দোষ স্বীকার করে নেয় ধৃত শরিফুল। তিনি জানান, সইফের উপর হামলা তিনিই করেছেন।
ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন সইফ:
এদিকে চিকিৎসকদের সূত্রে খবর, ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে এগোচ্ছেন সইফ আলি খান। অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছেন, না হলে ঘটতে পারত আরও বড় কিছু। সম্প্রতি, তাঁকে আইসিইউ থেকে জেলারেল বেডে দেওয়া হয়েছে। খাওয়া দাওয়া শুরু করেছেন নবাব। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সব ঠিক থাকলে দ্রুতই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে তাঁকে।