১৯৪৩ সালে একটি ব্রিটিশ অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিতে জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার পদে যোগ দেন সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। সেটিই তাঁর প্রথম চাকরি। তার কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে বেরিয়েছেন তিনি। শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং নন্দলাল বসু (Nandalal Basu)। কলাভবন থেকে বেরিয়ে আসার পর অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিতে যোগ দিয়ে তিনি প্রাথমিকভাবে কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলেন। কারণ, যা শিখে তিনি এসেছিলেন, ওখানে সেই কাজ ছিল তার থেকে অনেকটাই আলাদা। যদিও, তাতে তাঁকে (Satyajit Ray 101) খুব বেশিদিন আটকে রাখা যায়নি! তাঁর বিজ্ঞাপনী ক্ষেত্রের দক্ষতার সঙ্গে ধীরে ধীরে সম্যক পরিচয় হল তাঁর সংস্থা ডি জে কিমারের ঊর্ধ্বকর্তা এবং সাধারণ বাঙালি ক্রেতারও। মার্গো সাবানের বিজ্ঞাপন বানিয়ে প্রথমে নজরে আসেন তিনি। সেই শুরু।
তাঁর বিজ্ঞাপনের (Satyajit Ray art) আসল জাদু লুকিয়ে থাকত শব্দ, বর্ণ ও বিন্যাসের অপূর্ব মেলবন্ধনে। ভারতে প্রথম গ্রাফিক ডিজাইনের (Graphic design) শুরুও হয় তাঁর হাত ধরেই। এমন একটি সময়ে, যখন 'গ্রাফিক ডিজাইন' বিষয়টি সম্বন্ধেই এই দেশের মানুষ তেমনকিছু জানত না।
আরও পড়ুন: তাঁর সাহিত্যে সহজ ভাষা ও সাধারণ জ্ঞানের মাধ্যমে সত্যজিৎ পাঠককে বুঝিয়েছেন জীবনের জটিল দর্শন
দিলীপকুমার গুপ্ত'র সিগনেট প্রেসের হয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটদের লেখা বই 'আম আঁটির ভেঁপু'র অলঙ্করণ করার সময়েই প্রথম 'পথের পাঁচালী' (Pather Panchali) নিয়ে কাজ করার কথা মাথায় এসেছিল সত্যজিতের। নিজের ছবির পোস্টারও তিনি নিজেই আঁকতেন। এদিক থেকেও তিনি এই দেশে প্রথম।
‘পথের পাঁচালি’ ছবির পোস্টারে শব্দ দুটির রেখাঙ্কন যদি সেভাবে খেয়াল করা যায়, সেখানেও আমাদের গ্রাম্য সমাজের স্পন্দন ফুটে ওঠে। তার (Satyajit Ray films) ঠিক পরের ছবি 'অপরাজিত'র পোস্টারের নামাঙ্কন খেয়াল করলে দেখা যাবে ‘অ’বর্ণটি অন্যগুলির তুলনায় বেশ বড় করে আঁকা। 'অপুর সংসার' কথাটির ক্যালিগ্রাফিতেও (Satyajit Ray film poster) আলপনার ধাঁচ, 'দেবী' ছবির পোস্টারে দেবী শব্দটির রেখাঙ্কনে নাটমন্দিরের ঋজু স্তম্ভ লক্ষ করা যায়। ঠিক যেমন, 'চারুলতা'র রেখাঙ্কনে সেলাই বা এমব্রয়ডারির রেখা ফুটে ওঠে। 'কাঞ্চনজঙ্ঘা'র পোস্টারে ফুটে উঠতে দেখা যায় পর্বত।
সিনেমা পোস্টারে ছবির নামে এই মানের ক্যালিগ্রাফি বা লেখাঙ্কন তাঁর (Satyajit Ray) চলচিত্রের মতোই শিল্পকলাগুণময়। তাঁর অন্য সব নির্মানের মতোই তাঁর ছবির একেকটি পোস্টারের মধ্যেও রেখে গিয়েছেন দক্ষতা, মুন্সিয়ানা ও মননশীলতা অমোঘ মিশেল।