কিঞ্জল নন্দ। গত এক মাসে বাংলায় অন্যতম চর্চিত নাম। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম মুখ কিঞ্জল। প্রতিবাদী কিঞ্জল কিন্তু আসলে প্রেমিক মানুষ। প্রতিবাদ আর প্রেম তো হাতে হাত রেখেই চলে। সে কথা প্রমাণ হলো আরও একবার। ডাক্তারদের আন্দোলনের মাঝেই ফেসবুকের ডিপি বদলালেন অভিনেতা-চিকিৎসক। সে ছবি এখন টক অফ দ্য টাউন। ছবিতে স্ত্রীয়ের সঙ্গে মিছিলে হাতে হাত কিঞ্জলের! সে ছবিকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা।
জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এক স্লোগান। 'উৎসব না সংগ্রাম? ' সমস্বরে সকলে উত্তর দিচ্ছেন 'সংগ্রাম সংগ্রাম'। এই সংগ্রামে ডাক্তারদের পাশে রয়েছেন বাংলার হাজার হাজার মানুষ। সে তো ঘরের বাইরে। ঘরের ভেতরে হাতটা শক্ত করে কেউ ধরে না থাকলে পথে নামা যে অনেক কঠিন। কিঞ্জলের জীবনে তেমনই এক হাত ধরার মানুষ আছেন। ঘরেও, বাইরেও। পথের দাবিতে রাতারাতি মানুষের কাছে নায়ক হয়ে ওঠা কিঞ্জলের সঙ্গে পা মেলান নম্রতা। নম্রতা কিঞ্জলের বন্ধু, কমরেড, স্ত্রী, সবকিছুই।
কিঞ্জলের স্ত্রী নম্রতাও নিজের ডিপি বদলে ফেলেছেন একই ছবি দিয়ে। নম্রতা নিজেও পেশায় চিকিৎসক। কিঞ্জল-নম্রতার সন্তান মাস পাঁচেকের। তাই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে, প্রকাশ্য প্রতিবাদ-মিছিলে নম্রতাকে কম দেখা গেলেও আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাঁর। মিছিলের ছবি দিয়ে ডিপি বদলে দুজনেই বুঝিয়ে দিলেন, প্রতিবাদে, প্রেমে সবেতেই হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ রাখা দুজনের। ২০২২ এর নভেম্বরে বিয়ে করেন কিঞ্জল-নম্রতা। এ বছরের এপ্রিলে বাবা-মা হয়েছেন ওরা।
ওদের ছবিতে কিছু মুহূর্ত ধরা, যে সব মুহূর্ত কথা বলছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছে ওই ছবির কোলাজ। মনে পড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তোলা সেই বিখ্যাত চুম্বন দৃশ্যের ছবিকে। গ্রেটা এবং জর্জের সেই চুম্বন দৃশ্য। গ্রেটা এবং জর্জ অবশ্য পূর্ব পরিচিত ছিলেন না। তবে সুদিন আসছে, যুদ্ধ থামছে, শান্তি নামছে গোটা বিশ্বের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল , একুশের দুই তরুণ তরুণীর সেই আইকনিক চুম্বনদৃশ্য। কিঞ্জল-নম্রতার ছবিও এই অন্ধকার সময়ে হয়ে উঠল বাঙময়।
মঞ্চাভিনেতা হিসেবে ২০১৬-১৭ তেই প্রথম সারিতে উঠে এসেছিলেন কিঞ্জল। ততদিনে এমবিবিএস পাশ করেছেন। হাউস স্টাফ হিসেবে হাসপাতালে ডিউটি সামলে অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন। তারপর ওটিটি হয়ে বড়পর্দায় পা রাখা। অভিনেতা হিসেবে নজর কেড়েছেন, জনপ্রিয় হয়েছেন, কিন্তু চিকিৎসক হিসেবেও সমান কর্তব্যপরায়ন থেকেছেন।
আরজি করের ডিউটিরত মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় একেবারে প্রথম দিন থেকে সরব কিঞ্জল। বিগত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ডাক্তারদের আন্দোলনে, লালবাজার অভিযানে, স্বাস্থ্যভবনের সামনের অবস্থানে একেবারে প্রথম সারির মুখ কিঞ্জল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করা ৩০ জন জুনিয়র ডাক্তারের মধ্যেও তিনি ছিলেন একেবারে প্রথম সারিতেই। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন ক্লান্তিহীন ভাবে। আর এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, এই মাথা নয়া নোয়ানোর নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর স্ত্রী নম্রতা, বরাবর স্বীকার করেন কিঞ্জল।