'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণ-কর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী। অর্ধেক তার নর'
'নারী'-দের জন্য সেই কবে'সাম্যের গান' গেয়েছিলেন কবি । নারী স্বাধীনতা নিয়ে সমাজকে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন । তবে, ৮০-৮৫ বছর আগের নজরুলের যুগ এখন আর নেই । বর্তমান সমাজ অনেকটা উন্নত । কিন্তু, 'নারী স্বাধীনতা', 'সাম্য'...এই শব্দগুলোর অর্থ আদৌ কি পাল্টেছে ? হ্যাঁ এটা ঠিক যে, নারীরা এখন সব জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে,সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন । কিন্তু, আদৌ কি নারীরা স্বাধীন, সুরক্ষিত ? অভয়া, আরজিকর-এর...ঘটনাগুলো কিন্তু বারবার সেই প্রশ্নই তুলে দেয় । নমস্কার আমি শুভশ্রী, এডিটরজি বাংলায় আপনাকে স্বাগত, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনেক শুভেচ্ছা ।
নারী দিবসে নারীদের নিয়ে কথা তো হবেই । আচ্ছা সিনেমা তো দেখেন, কখনও ভেবে দেখেছেন, নায়িকা ছাড়া সিনেমা । একটা সময় এমনই চল ছিল । সিনেমায় কোনও মহিলা অভিনয় করতেন না । সিনেমায় মেয়েদের অভিনয় করাটা বাঁকা চোখে দেখত তৎকালীন সমাজ । থিয়েটার হোক সিনেমা, পুরুষরাই মহিলা সেজে অভিনয় করতেন । জানেন, বলিউডের প্রথম নায়িকা কে ছিলেন ? আন্না সালুঙ্কে । একজন পুরুষ । দাদাসাহেব ফালকেই কিন্তু প্রথম মহিলা চরিত্রকে সিনেমায় নিয়ে এসেছেন ।
দাদাসাহেব ফালকে ১৯১৩ সালে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেন ভারতে । সিনেমাটি তৈরির সময় তিনি বুঝতে পারেন একজন অভিনেত্রী প্রয়োজন । কিন্তু, সেইসময় কোনও মহিলা অভিনয় করতে রাজি হননি । তখন দাদাসাহেব সিনেমায় নিয়ে এলেন আন্না সালুঙ্কেকে । মহিলা চরিত্রে অভিনয় করলেন । আর বিনোদন জগত পেল প্রথম নায়িকা । এরপরেও আন্না সালুঙ্কে একাধিক সিনেমায় মহিলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ।
আর বলিউডের প্রথম অভিনেত্রী ? নাম দুর্গাবাই কামাথ । তিনিও দাদাসাহেবেরই আবিষ্কার । 'মোহিনী ভস্মাসুর' সিনেমা তৈরির সময় দুর্গাবাই কামাথকে কাস্ট করেন । একইসঙ্গে সব স্টেরেওটাইপ ভেঙে দেন তিনি । বিনোদন জগতে বিপ্লব তৈরি করেন । নতুন দরজা খুলে দেন । সিনেমার প্রধান চরিত্রে 'পার্বতী' হিসাবে অভিনয় করেন। তাঁর ১৩ বছরের মেয়ে কামলাবাই গোখলে 'মোহিনী' চরিত্রে অভিনয় করেন । তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা শিশু অভিনেত্রী ।
একজন মহিলা হিসেবে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য কম কটাক্ষের শিকার হননি । কিন্তু, পিছিয়ে যাননি । সমাজের কড়া নিয়মের বিরোধিতা করেছিলেন । দুর্গাবাই মারাঠি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । ছোটবেলা থেকেই নাচ-গানের পরিবেশে বড় হয়েছেন । অভিনেত্রী নিজেও নাচ, গান, তবলা, বীণায় পারদর্শী ছিলেন । তবে,তাঁর পরিবার অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিল । সেই পরিবারের মেয়ে হয়ে সিনেমায় অভিনয় করার সাহস দেখিয়েছিলেন দুর্গাবাই । বলা ভাল, সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দুর্গার মতোই আজকের কাজল, দীপিকা, কিয়ারা আডবানিদের পথ প্রসস্থ করেছিলেন তিনিই ।
দুর্গাবাই কামাত তাঁর কেরিয়ারে মোট তিনটি ছবিতে কাজ করেছিলেন । এর মধ্যে দুটি ছিল সাইলেন্ট মুভি, মোহিনী ভস্মাসুর এবং বাবাঞ্চি বাইকো। শেষ প্রোজেক্টটি ছিল 'গুলামি জাঞ্জির' । তারপর আর অভিনেত্রীকে বড়পর্দায় দেখা যায়নি ।