জানি না ফুরবে কবে এই পথ চাওয়া।
সালটা ছিল ১৯৫৪। মুক্তি পেল অগ্নিপরীক্ষা। আক্ষরিক অর্থে সবার কাছে এই ছবি ছিল অগ্নিপরীক্ষা। এক ঝাঁক নতুন তারকা। এমনকী প্লেব্যাকে এমন একজন মহিলা কণ্ঠকে বাঙালি শুনল, যাঁর সম্পর্কে অনেক তথ্য সেইসময় সিনেমাপ্রেমীদের কাছে অজানা ছিল। অনুপম ঘটকের সুরে ছবির নায়িকা সুচিত্রা সেনের কণ্ঠে এই গান শুনতে শুনতে অনেকে ভেবেছিলেন এটা কী সুচিত্রা সেন-ই গাইছেন। এরপর বাকিটা ইতিহাস....
সেই পথ শেষ হয়েছে মঙ্গল সন্ধ্যায়। প্রয়াত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ভারতীয় মার্গ সংগীত থেকে আধুনিক, তাঁর গলায় কাল জয়ী। সেই কণ্ঠ আজ স্তব্ধ। ১৯৩১ সালে ৪ অক্টোবর ঢাকুরিয়ার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। তালিম উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খানের কাছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেই তাঁর পরিচয়। কিন্তু রাই চাঁদ বড়াল থেকে কবীর সুমন- এটাই ছিল গীতশ্রীর বিস্তার।
বাংলার আগেই অবশ্য হিন্দিতে প্লেব্যাক করা হয়ে গিয়েছিল। ১৯৪৮ সালে রাই চাঁদ বড়ালের সুরে তাঁর প্রথম গান। কিন্তু ১৯৫৪ সালে মুক্তি পাওয়া অগ্নিপরীক্ষা ছিল প্লেব্যাক গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে বাঙালি দর্শক সুচিত্রা কণ্ঠে সন্ধ্য মুখোপাধ্যায়ের গান শুনতেন চোখ বন্ধ করে।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র। মাইক্রোফোনের ওপাশে সঙ্গী বদলেছে, কিন্তু সন্ধ্যা একই রয়ে গিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম কয়েক দশক জুড়ে আধুনিক বাংলা গান উৎকর্ষের শিখরে উঠেছিল। বাংলা গানের সেই 'স্বর্ণযুগে'র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি ছিলেন কিংবদন্তি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: Sandhya Mukherjee: সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শ্রদ্ধা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ইন্দ্রানী সেনদের
বাংলা সিনেমায় সুচিত্রা সেনেই বাইরে গিয়েও তিনি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় হয়ে থেকে গিয়েছেন। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, অর্পনা সেন, লিলি চক্রবর্তী এমনকী তনুজার গলাতেও তিনি ছিলেন সমান সাবলীল। ১৯৬৬ সালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বিবাহ করেন কবি শ্যামল গুপ্তকে। সন্ধ্যার বহু গানের গীতিকার তিনিই।
আরও পড়ুন: Sandhya Mukherjee Passes Away: প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, থেকে গেল 'চিরদিনের গান'
সরস্বতীর বরপুত্রী ছিলেন। কিন্তু এড়িয়ে যাননি সামাজিক দায়িত্ব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পথে নেমে অর্থ সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই অনুষ্ঠান করেছেন ঢাকায়।
কিছুক্ষণ আরও না রহিতে পাশে....সেই সময়টুকু দিলেন না। মঙ্গল সন্ধ্যায় সন্ধ্যার অবসান হতে গানেই রয়ে থাকল তাঁর যাবতীয় ইন্দ্রধনু। তাঁর মৃত্যুতে একদিকে যেমন শোকস্তব্ধ পশ্চিমবঙ্গ, তেমন শোকবিহ্বল কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশও।