ঋত্বিক ঘটক কবেই বলেছিলেন,
'ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো', আমরা ভুলে যাই রোজ। ভাবতে ভুলে যাই একটু একটু করে। সাম্প্রতিক এক বাংলা ছবি আবার আমাদের মনে করিয়ে দিল, আমরা আসলে অভ্যেসে বাঁচছি। যে অভ্যেস, যা দেখছি, শুধু তা নিয়ে আত্মমগ্ন হতে শেখায়। সেই ছক থেকে বেরিয়ে এলে, জীবন কেমন? পূবের জানলা দিয়ে দেখলে একরকম, দক্ষিণের বারান্দা থেকে আরেক রকম। আসলে সত্যি কোনটা? ধ্রুব সত্যি, কোনটা?
চারটে আলাদা আলাদা গল্প নিয়েই অভিজিৎ চৌধুরীর প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি 'ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন' আসলে বলে ধ্রুবর জীবনের কোন সত্যি ধ্রুব সত্য নয়। আমাদের কারোর জীবনেই নয়। চারটে আলাদা আলাদা গল্পে ধ্রুব কোথাও জিতছে, কোথাও হেরে যাচ্ছে, কোথাও বা জেতা হারার মাঝে। প্রতি জীবনেই কোথাও না কোথাও ধ্রুব আর রিমির দেখা হয়ে যাচ্ছে।
এই জীবন কোন পথে এগোবে, কে ঠিক করে? কোনও সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত এক্স না হয়ে ওয়াই হলে কেমন হত। এ গল্প এক্স পথে হেঁটে আবার ফিরে আসে স্কোয়ার ওয়ানে। সেখান থেকে ফের ওয়াই পথ ধরে চলার শুরু। কোনও সম্ভাবনাই মিথ্যে নয়। খারিজ করার নয়। জীবন, অনন্ত সম্ভাবনার যোগফল। আর বারবার এই এগনো, ফিরে আসা, আবার সফর শুরুর পথে পরিচালক অভিজিৎ হাত ধরেছেন বাংলার চার কিংবদন্তি শিল্পীর। ধ্রুবর এক একটা পথের শেষে দাঁড়িয়ে সে সব শিল্পীর আইকনিক শিল্পকর্ম। যামিনী রায়, গগনেন্দ্রনাথদের কাজ, আগে কোনও বাংলা ছবির চরিত্র হয়ে উঠেছে বলে, মনে পড়ে না। এই ছবি অনন্য, নানা কারণেই।
ছবিতে ঋষভ বসু, ঋত্বিকা পাল, আনন্দরূপা সহ প্রত্যকের অভিনয় রীতিমতো দাগ কাটে। সংগীত, ছবির নির্যাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তাহলে এ ছবির দুর্বল দিক কী একেবারেই নেই। না, ছবির সেকেন্ড হাফের শুরু যেন বেশ কিছুটা খাপছাড়া। বিরতির পর, ছবির ছন্দ কিছুটা হারায়। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাজের সঙ্গে গল্পের চলন মেলাতে কিছুটা সমস্যা হবে দর্শকদের।
তবে, বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা মাথায় রেখে বানানো ছবির ভিড়ে এই ছবি যেন নতুন ভাবনার খোরাক দেয়। এ ছবি, বলে যায় বক্স অফিস সত্য, কিন্তু ধ্রুব সত্য নয়।