গায়ে টি-শার্ট। জগার্স। গলায় হলুদ গামছা জাতীয়। গুটি গুটি পায়ে নেমে আসছে সিঁড়ি বেড়ে। বাঁক খাওয়ার আগে একবার তাকিয়ে নিল ক্যামেরার দিকে।
বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে কি হয়েছিল পাতৌদি পরিবারের অন্দরে ? সেই ঘটনার তদন্তে নেমে আপাতত এইটুকু ফুটেজই সামনে আনতে পেরেছে মুম্বই পুলিশ। যেখানে ধরা পড়েছে দুষ্কৃতী। যে এমন ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে, তাতে দেখে মনে হচ্ছে যেন নিজের বাড়ি থেকে পাড়ার চায়ের দোকানে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যুবক কি জানত না, কার বাড়িতে সে ঢুকেছে ?
আবার এই যুবক অবলীলায় বাড়ির মধ্যে ঢুকল, আবার বেরিয়ে গেল, তাহলে সইফ আলি খানের বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা কোথায় ছিলেন ? বান্দ্রার যে পাড়ায় নবাব-পুত্র থাকেন, সেই পাড়াকে অভিজাত বললেও কম বলা হয়। সেখানে বাইরে থেকে একজন এল। বাড়ির পাঁচিল টপকে অন্দর মহলে চলে গেল, তার পর সইফকে জখম করে আবার বেরিয়ে গেল ? কী ভাবে সম্ভব হল এই কাজটা ?
যাইহোক গত ২৪ ঘণ্টা পর কিছু কিছু তথ্য খতিয়ে দেখছে মুম্বই পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তাদের দাবি, রাত ১১টার সময় খাওয়া-দাওয়ার পর ন্যানির হাত ধরে ঘুমোতে যায় সইফ-পুত্র জাহাঙ্গির। তার দুই ন্যানি তাকে বিছানায় শুইয়ে দেন। মুম্বই পুলিশের দাবি, ঘটনার সূত্রপাত রাত দুটোর সময়।
প্রাথমিক রিপোর্টে মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে জ্বলে ওঠে আলো। প্রথমে মনে হয়েছিল মা করিনা ঘরে ঢুকেছেন। কিন্তু দেখা যায় অন্য ছায়া মূর্তি। জাহাঙ্গিরকে বাঁচাতে ছুটে যান তার দুই ন্যানি। ছুরি বার করে হুমকি দেয় দুষ্কৃতী। দাবি করা হয় ১ কোটি টাকার মুক্তিপণ। আওয়াজ করতে মানা করা হয়।
প্রাথমিক ভাবে দুষ্কৃতীকে বাধা দিয়েছিলেন দুই ন্যানি। কারণ, তাঁদের মনে হয়েছিল জাহাঙ্গিরকে অপহরণ করতেই বাড়িতে ঢুকেছিল ওই দুষ্কৃতী। এর মধ্যে প্রথমে ঘরে এসেছিলেন করিনা। আওয়াজ শুনে তাঁর পিছনেই আসেন সইফ। ওই ঘরের মধ্যে আরও এক নার্স এসে দুষ্কৃতীকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। প্রবল চিৎকারে পিছু হঠে ওই দুষ্কৃতী। এরমধ্যে সইফকে প্রথম কাঠের কোনও বস্তু এবং পরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে ওই দুষ্কৃতী। তারপর সে পালিয়ে যায়।
মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে এই বয়ানই দিয়েছেন ৫৬ বছরের এলিমিয়া ফিলিপ। তাঁর সন্দেহ ডাকাতি নয়, জাহাঙ্গিরকে অপহরণ করতেই হয়তো সইফ-করিনার অন্দরে হানা দিয়েছিল এই দুষ্কৃতী। কিন্তু জাহাঙ্গিরের ন্যানির সঙ্গে পুরোটা একমত হতে পারছে না পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা। হাই-প্রোফাইল এই কেসের তদন্তের নেতৃত্বে মুম্বই পুলিশের এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট দয়া নায়েক।
আচ্ছা দেখুন তো সিসিটিভিতে ধরা পড়া যুবক আর বান্দ্রা থানায় আনা যুবকের মধ্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে কীনা ? দুষ্কৃতী সন্দেহে শুক্রবার এই ব্যক্তিকেই আটক করেছে মুম্বই পুলিশ। জেরা চলছে। গত কয়েক ঘণ্টায় প্রবল ঝড় গিয়েছে পাতৌদি পরিবারের উপরে। তারপর বিধ্বস্ত করিনার বিবৃতি, একটা ভীষণ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সবার কাছে বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ করছেন না জেনে কোনও কিছু প্রকাশ করবেন না। মুম্বই পুলিশ তাঁর ও পরিবারের পাশে রয়েছে। বাকি যাঁরা তাঁদের পাশে রয়েছেন, সবাইকে ধন্যবাদ। কিন্তু তিনি সবাইকে অনুরোধ করলেন, এই সময়ে তাঁদের একটু একা থাকতে দিন।
করিনার এই বিবৃতির আগেই কিন্তু সইফের ঘটনায় মুম্বইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বলিউড। করিশ্মা থেকে রবিনা সবার অভিযোগ, এই শহরে তো আর নিরাপদে থাকার জো নেই। কী ভাবে থাকবেন তাঁরা ? বলিউডকে ঠান্ডা করতে আসরে নামতে হয়েছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। তাঁকে বলতে হয়েছে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুম্বই নিরাপদ ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
ক্রাইম, অন্ধকার জগৎ, বলিউড -- এই যোগ আজকের নয়। সেই সাতের দশকে হাজি মস্তানের সময় থেকে। সময়ের কালের দাউদ ইব্রাহিমের হাত ঘুরে এখন লরেন্স বিষ্ণোইয়ের হাতে বলেই দাবি মুম্বই পুলিশের। এই গ্যাং ভাঙতেই এবার ময়দানে দয়া নায়েক। যাঁর জন্য এই কর্মকাণ্ড, তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ। তিনি সইফ আলি খান। লীলাবতী থেকে বার্তা, অপারেশনের পর ভাল আছেন। ভাল ঘুমও হয়েছে।