এই কলকাতার বুকে, বেনিয়াপুকুরের এক পুরনো বাড়িতে এক টুকরো দার্জিলিং নিয়ে বসে থাকেন তিনি। অঞ্জন দত্ত। তাঁকে ঘিরে বসত করে হাজার কিসিমের মানুষজন। কারও নাম বেলা, কারও রঞ্জনা, কেউ জয়ি। কেউ আবার কালো সাহেবের মেয়ে মেরি অ্যান, যার বয়স বেড়েছে, চুলে পাক ধরেছে, কলকাতার রাস্তায় টানা রিকশায় বসে বাড়ির ফেরার সময় যিশু ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকেন তার দিকে। রডন স্ট্রিটে হাঁটুজল ভেঙে ভাঙাচোরা রিকশ চালান এক বৃদ্ধ। মাসের প্রথমে অশোকা বারে ঢুকে নিজেকে সম্রাট ভেবে ফেলে কোনও মধ্যবিত্ত কেরানি৷ মার্গো সাবানের সংসারের মায়া কাটিয়ে আচমকা উড়ান হরিপদ কেরানি।
এই সবটুকু নিয়েই অঞ্জন দত্ত। তাঁর গান, তাঁর সিনেমা। এবং অবশ্যই থিয়েটার। অঞ্জনের বয়স বাড়ে, তিনি বাড়েন না। তাঁর গানে পাহাড়ি রাস্তায় আঁকাবাঁকা শরীরের আলো, ফুটপাথের কলে স্নান করার সময় ঝলমল করে ওঠা কিশোরের শরীর, অফিসফেরত ক্লান্ত মধ্যবিত্তের নাছোড় আশাবাদ আর অনন্ত সাতের দশক।
আরও পড়ুন: Narayan Debnath : নারায়ণ দেবনাথের সঙ্গেই পথ চলা শেষ বাঁটুল, নন্টে-ফন্টেদেরও
কবীর সুমনের গানের ধারাবাহিকতায় নতুন বাংলা গানের যে জোয়ার এসেছিল, অঞ্জনের গান তারই সন্তান। তবে মৃণাল সেনের প্রিয় অভিনেতা বা ম্যাডলি বাঙালির পরিচালককে বাঙালি বার বার ঝলসে উঠতে দেখেছে মঞ্চে। 'সেলসম্যানের সংসার' অথবা 'গ্যালিলেও'- মঞ্চে অঞ্জন মানেই তিনি।
তিনি থিয়েটার করেন, সিনেমা বানান, গান বাঁধেন, আরও কত কী! কিন্তু শেষ পর্যন্ত অঞ্জন দত্ত সেই লোকটি, যিনি অনেকটা ভালোবাসা দিয়ে বুকের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখেন এই 'খ্যাপাটে শহর'টাকে।
৬৯ বছরে পড়লেন তিনি। শুভ জন্মদিন, অঞ্জন দত্ত।