রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এপার ওপার বাংলার মধ্যে তৈরি হয়েছে খানিক দূরত্ব। কিন্তু দুই বাংলার মানুষের ভাষা যে এক, কাঁটাতারের এপার ওপারের মানুষেরা এখনও বাংলা ভাষায় কথা বলেন। তবু এই হানাহানি কেন? বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর থেকেই দুই বাংলার মধ্যে যোগাযোগ ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। এপার বাংলার অভিনেতারা বাংলাদেশে যেমন চুটিয়ে কাজ করেছেন, তেমনই বাংলাদেশের বহু প্রতিভাকেও দুহাত ভরে গ্রহণ করেছে এই বাংলা।
কিন্তু গত কয়েকদিনে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে বেড়েছে দূরত্ব। দুই দেশের মধ্যে মিতালি এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস, মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাতায়াত কমে গিয়েছে। এবারের বইমেলা এবং চলচ্চিত্র উৎসব থেকেও বাদ পড়েছে বাংলাদেশ। অথচ এই দেশের চলচ্চিত্র বহুবার সমৃদ্ধ হয়েছে পদ্মাপাড়ের শিল্পীদের সান্নিধ্য পেয়ে। এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু শিল্পীদের খোঁজ দেব, যাঁরা ওপার এপারের বিভেদ মুছে দিয়েছেন।
জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী থেকে মোসারফ করিমরা যেমন বাংলার সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছেন ঠিক তেমনই এপারের হালফিলের মিমি, ইধিকা থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তরা।
সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেতের ববিতা সেসময় মুগ্ধ করেছিলেন এপারের দর্শকদের। আটের দশকে টালিগঞ্জে ঝড় তুলেছিলেন ওপারের রোজিনা ও অঞ্জু ঘোষরা। এর মধ্যে বেদের মেয়ে জ্যোত্স্না ছিল অন্যতম সেরা বক্সঅফিস হিট।
আবর্ত দিয়ে কলকাতায় পসার জমিয়েছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। তারপর থেকে আর কখনও পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি কাজ করছেন কলকাতায়। বিসর্জন, বিজয়া, থেকে শুরু করে দ্বিতীয় পুরুষ- এই বাংলার তাবড় পরিচালকরা ভরসা করেছেন তাঁর উপর। রাজকাহিনী, কণ্ঠ , আমি জয় চ্যাটার্জি, ভালবাসার শহর, ভুতপুরীর মতো ছবিতেও তাঁর অভিনয় প্রসংশিত।
চঞ্চল চৌধুরীর কথাই বা বাদ যায় কীভাবে? এপারের মায়েস্ত্র পরিচালক মৃণাল সেনের ভূমিকায় আর কেউ নন, চঞ্চল চৌধুরীর উপরেই ভরসা রেখেছেন সৃজিত। বাঁধনকে নিয়ে বানিয়েছেন ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ ।
দেরিতে হলেও কলকাতায় নিজের অভিনয়ের দাগ রেখেছেন অভিনেতা মোশারফ করিম। ব্রাত্য বসু পরিচালিত ডিকশিনারি তাঁর প্রথম কাজ, এরপর তাঁর ‘হুব্বা’তেও অভিনয় করেছেন মোশারফ। সঙ্গে তাঁর অভিনীত ওপারের সিরিজ ‘মহানগর’ এপারের দর্শকদের থেকে অসঙ্খ্য প্রসংশা কুড়িয়েছে। অতনু ঘোষের ‘আরও এক পৃথিবী’ ছবি দিয়ে কলকাতায় অভিষেক হয়েছে ওপারের অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিনের। ‘বিবাহ অভিযান’ ছবিতে দেখা গিয়েছে নুসরত ফারিয়াকে। একই ভাবে ওপারের ছবিতেও নায়িকা হয়ে মাতিয়ে দিয়েছেন ইধিকা মিমিরা।
এগিয়ে আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি, ভাষার দিন। বাংলা ভাষার দিন, মাতৃ ভাষার দিন। তবুও যেন একই ভাষায় কথা বলা এক দেশের কথা আর অন্য দেশটা বুঝতে পারছে না। হয়ত শিল্পই আবার পারবে খুব শিগগির এই দ্বন্দ্ব ঘুচিয়ে দিতে।