বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে একাত্তরের যুদ্ধের সময়টি নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন পর্ব চলছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই তিন দেশের মধ্যেই।
বাংলাদেশের কাছে এটি পাকিস্তানের ভয়ঙ্কর খান সেনার বিরুদ্ধে বাঙালিদের অসম লড়াই জিতে যাওয়ার গল্প। ভারত আর পাকিস্তানের কাছে আবার সেটিই বয়ে নিয়ে আসে তৃতীয় ভারত-পাক যুদ্ধের স্মৃতি।
যুদ্ধের মূল কারণ কী ছিল?।
১৯৪৭ সালে 'পাকিস্তান' নামে নতুন রাষ্ট্রের জন্মের পর ওই দেশ সংযুক্ত ছিল দুটি প্রদেশে। একটির নাম ছিল পশ্চিম পাকিস্তান আরেকটি পূর্ব পাকিস্তান। দেশভাগের পরেই বাংলাকে ওই দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মানতে রাজি ছিল না পাকিস্তান। তা নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিল বহু বাঙালি মুসলমান। দুই প্রদেশের বাসিন্দাদের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে শুরু করে ভাষা ও সংস্কৃতির বিশাল পার্থক্য- সবটাই ছিল ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেপথ্যের কারণ।
ধিকিধিকি আগুনটা ছিলই আসলে। সেই আগুনে ঘি পড়ে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে। সাধারণ নির্বাচনে জিতে গেল শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ। কিন্তু, তাদের নেতৃত্ব স্বীকার করতে রাজি হয়নি পাকিস্তান পিপলস পার্টি।
ভারতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়েছিল কোথায়?
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনা যখন তাদের বাঙালি বিরোধীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার এক হাড়হিম বাতাবরণ তৈরি করা শুরু করল এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হল পশ্চিম পাকিস্তানে, সেই সময়ই অজস্র বাংলাদেশি রিফিউজি ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে আসেন। যা ভারতকে একপ্রকার 'নাক গলাতে' বাধ্য করায়।
একটি অঙ্ক বলে, ওই যুদ্ধে পাক সেনার হাতে নিহত হয় ২৬০০০ মানুষ। যদিও বাংলাদেশের দাবি, অঙ্কটা প্রায় ত্রিশ লক্ষ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাঃ সম্পূর্ণ সময়পঞ্জী
২৫ মার্চ, ১৯৭১ঃ 'অপারেশন সার্চলাইট'-এর সূচনা করল পাক সেনা। নির্বিচারে আক্রমণ চালানো হল সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ এবং পুলিশের ওপর।
২৬ মার্চঃ স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গ্রেফতার হলেন তিনি।
১ এপ্রিলঃ পাক সেনার আক্রমণ অব্যাহত রইল।
১৫ মেঃ বাংলাদেশের গেরিলা যোদ্ধাদের মুক্তি বাহিনীকে সাহায্য করা শুরু করল ভারত।
১৫ অগস্টঃ অপারেশন জ্যাকপটঃ ভারতীয় সেনার সাহায্যে পাক সেনার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রত্যাঘাত করল বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী।
সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরঃ ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাক সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগল বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী।
৩ ডিসেম্বরঃ পাকিস্তানের তেলের ঘাঁটি বাংলাদেশ ধ্বংস করে দেওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে এয়ার স্ট্রাইক করল পাকিস্তান।
৩ ডিসেম্বরঃ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বললেন, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এই এয়ার স্ট্রাইককে 'যুদ্ধের ইঙ্গিত' হিসাবেই দেখছে তাঁর সরকার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করল ভারত।
৪ ডিসেম্বরঃ রাজস্থানের পশ্চিম প্রান্তে পাকিস্তানের হামলাকে সফলভাবে প্রতিহত করল ভারত।
৪-৫ ডিসেম্বরঃ অপারেশন ট্রাইডেন্ট- করাচির বন্দরের সামনে পাক জাহাজকে আক্রমণ করল ভারতীয় জলসেনা।
৭ ডিসেম্বরঃ সিলেটের যুদ্ধ শুরু। মুক্তি পেল যশোর আর সিলেট।
৮ ডিসেম্বরঃ অপারেশন পাইথন- করাচিতে পাক জাহাজের ওপর ফের আক্রমণ চালাল ভারত।
১১ ডিসেম্বরঃ হিলি, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, নোয়াখালি মুক্ত হল পাক সেনার হাত থেকে।
১৬ ডিসেম্বরঃ হার স্বীকার করল পাকিস্তান। হার স্বীকার করে চুক্তিতে সই করলেন জেনারেল নিয়াজি। স্বাধীন হল বাংলাদেশ।