বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ওপরেই আস্থা রেখেছে বাংলার মানুষ। বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে তৃণমূল। যে নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল, সেই কেন্দ্র থেকে হারতে হয়েছে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ছয় মাস মুখ্যমন্ত্রীত্বের মেয়াদ শেষ করে এবার ভবানীপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী তিনি।
ভবানীপুরের ঘরের মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিধানসভা নির্নবাচনে নন্দীগ্রামে থেকেই এবার ভোটের লড়াইয়ে নামেন মমতা। বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে কিছু ভোটে পরাজিত হন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ধরে রাখতে হলে ছয়মাসের মধ্যেই যেকোনও কেন্দ্র থেকে জয় ছিল আবশ্যিক।সেই লড়াইয়ের জন্য ভবানীপুরকেই বেছে নিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজনীতির মঞ্চে এরকম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এর আগেও অনেকবার হয়েছে।
মাধবরাও সিন্ধিয়া বনাম অটল বিহারী বাজপেয়ী
লড়াই ঘর ঘর কী
গোয়ালিয়রের মহারাজা জিওয়াজিরাও সিন্ধিয়ার স্নেহধন্য ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। জনসঙ্ঘ দলের হয়ে ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর সময় তিনি রাজপরিবারের আশীর্বাদ পান। রাজমাতা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়াও বাজপেয়ীকে আশীর্বাদ করেন। নমিনেশন জমা দেওয়ার আগের মুহূর্তে তাঁদেরই ছেলে মাধবরাও সিন্ধিয়াকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায় কংগ্রেস। বাজপেয়ী গোয়ালিয়র থেকে সরে ভিন্দে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের স্লোগান ছিল- 'লড়াই ঘর ঘর কী'। রাজমাতা নিজে বাজপেয়ীর হয়ে প্রচারে অংশ নেন। সেবার ভোটে গোটা দেশে মাত্র দুটো ভোট পেয়েছিল জনসঙ্ঘ দল। ১.৭৫ লাখ ভোটে বাজপেয়ীকে হারান মাধবরাও সিন্ধিয়া।
সোনিয়া গান্ধী বনাম সুষমা স্বরাজ
ফরেন বহু বনাম ইন্ডিয়ান বেটি
১৯৯৯ লোকসভা নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে লড়াই করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। কর্নাটকের বেলারি এবং উত্তরপ্রদেশের আমেঠী। দুটি কেন্দ্রেই জয় পান তিনি। কিন্তু বেলারিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল সেবার। সোনিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপির অন্যতম সুবক্তা সুষমা স্বরাজ। বেলারি কেন্দ্রে বিজেপি প্রচারে নতুন স্লোগান আনে, ফরেন বনাম দেশি। জন্মসূত্রে ইতালিয়ান হওয়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয় সোনিয়া গান্ধীকে। কিন্তু দিনের শেষে ৫৬ হাজার ভোটে জয় পান সোনিয়াই।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল বনাম শীলা দীক্ষিত
আনার্কি বনাম লুটিয়ান
৮ ডিসেম্বর, ২০১৩। নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণা করার অনেক আগেই গভর্নরের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন দিল্লি কংগ্রেসের তিনবারে মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। সাংবাদিকরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। ছুটে আসে অনেক প্রশ্ন। মানুষের মন বুঝতে কেন ব্যর্থ হল কংগ্রেস? এই প্রশ্নের সোজা উত্তর দিয়েছিলেন শীলা দীক্ষিত। বলেন, বোকা তাই বুঝতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে নমিনেশন জমা দেন আম আদমির পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দুর্নীতি, জল, বিদ্যুৎ, মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রচার করে আম আদমি পার্টি। ২৫ হাজার ভোটে জিতে দিল্লির মসনদে আসেন কেজরিওয়াল।
স্মৃতি ইরানি বনাম রাহুল গান্ধী
কংগ্রেস দুর্গের পতন
ভারত ও উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র আমেঠী। কংগ্রেসের দুর্গ বলা হত এই কেন্দ্রকে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৫৫ হাজার ভোটে হারেন রাহুল গান্ধীর। প্রথমবার একানে জয় পায় বিজেপি।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনেও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন স্মৃতি ইরানি। এক লাখের বেশি ব্যবধানে সেবার জেতেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু হারের পরও কেন্দ্রে নিয়মিত যেতেন স্মৃতি। মানুষের সঙ্গে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের গণনার দিনই চমক দেখা যায়। প্রথম রাউন্ড থেকেই এগিয়ে ছিলেন স্মৃতি। জয়ের পর স্মৃতিকে শুভেচ্ছা জানান রাহুল গান্ধী।