কাতারে যখন বসেছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর, ঠিক তখনই গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ায় শুরু হল এক অন্য বিশ্বকাপ। সেখানেও ঠিক ফিফা বিশ্বকাপের মতোই ৩২টি দেশের জার্সি পরে অংশ নিচ্ছে তিন শতাধিক ফুটবলার। তারা প্রত্যেকেই শিশু। সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপে থেঁৎলে গিয়েছে তাদের শৈশব।
বিদ্রোহীদের দখলে থাকা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় শনিবার শুরু হয়েছে এই টুর্নামেন্ট। শিশুরা ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া এক একটি দেশের জার্সি পরে খেলছে। বিশ্বকাপের মতোই এখানেও উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল কাতার এবং ইকু্য়েডরের জার্সি পরা শিশুরা। সংবাদসংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
১২ বছর বয়সী বাসেল শেইকো একটি গ্যারাজে কাজ করে। তার গায়ে স্পেনের জার্সি। বাসেল জানিয়েছে কাপ জেতার বিষয়ে সে খুবই আত্মবিশ্বাসী।
ইডলিব এবং আশেপাশের অঞ্চলে ঘরছাড়া মানুষজনের থাকার জন্য অনেকগুলি শিবির রয়েছে। সেই সব উদ্বাস্তু পরিবারের শিশুদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ২৫টি টিম। বাকি ৭টি টিম তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শিশুদের নিয়ে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। সরকার এবং বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে অন্তত আধ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক মিলিয়ন মানুষ। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিরোধিতা দমনের জন্য বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইডলিব অঞ্চলের তিন মিলিয়ন বাসিন্দার অর্ধেকই ঘরছাড়া মানুষ।
এই বিশ্বকাপের নাম 'ক্যাম্পস বিশ্বকাপ'- উদ্বাস্তু শিবিরের বিশ্বকাপ। ভায়োলেট নামে যে এনজিও এর উদ্যোক্তা, তাদের কর্মকর্তা ইব্রাহিম সারমিনি জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সের বাচ্চাদের বেশ কয়েক মাস ধরে এই টুর্নামেন্টের জন্য ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বের নজর যাতে এই উচ্ছেদ হওয়া শিশুদের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সে জন্যই এই আয়োজন।
প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন যে বিদ্রোহীরা, তাঁদের দখলে রয়েছে ইডলিব রাজ্যের অনেকখানি এলাকা। ইডলিব সংলগ্ন আলেপ্পো, হামা এবং লাটাকিয়া প্রদেশের বহু জায়গা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কাতারে যতদিন বিশ্বকাপ চলবে, ঠিক ততদিন এই বিশ্বকাপ চলবে। ফাইনাল হবে ইডলিবেই।
সিরিয়ায় শীত পড়তে শুরু করেছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে প্রবল শৈত্য গ্রাস করবে শরণার্থী শিবিরগুলিকে। সেই সঙ্গে রয়েছে বৃষ্টির আশঙ্কা, যা ভয়াবহ করে তুলবে পরিস্থিতি। তার মধ্যেই জীবনের জন্য ফুটবল পায়ে ছুটবে ঘরছাড়া শিশুরা। যদি একবার গোটা বিশ্বের নজরে আসা যায়। যদি কোনওমতে ফেরা যায় নিজেদের ঘরে।