পাকিস্তান সফরে ঘুরে এসেছিলেন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ৬ কর্তা। আচমকা ৬ জন বাংলাদেশের সেনাকর্তা কেন পাকিস্তান গেলেন! তা নিয়ে আগেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। সূত্রের খবর, এরপরই ঢাকা বিমানবন্দরে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের চার উচ্চপদস্থ সামরিক কর্তাকেও। যা কপালে ভাঁজ ফেলেছে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের। যদিও ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের সরকারি মাধ্যমে এই নিয়ে কোনও কথা হয়নি। তবে চিন্তা বাড়িয়েছে কয়েকটি বিষয়। পাকিস্তান সেনাকর্তাদের আসার খবর নিয়ে চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে ঢাকা এসেছেন সেনাকর্তা লেফনেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক। আইএসআই-এর প্রধান তিনি। ওই দলে আইএসআইয়ের আরও এক উচ্চপদস্থ কর্তাও আছেন বলে সূত্রের খবর।
আমেরিকায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই পাকিস্তানের সেনাকর্তা ও আইএসআই-এর প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা দানা বাঁধছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি দলটি আরব আমিরশাহির একটি উড়ান সংস্থার বিমানে ঢাকা এসেছে ওই প্রতিনিধি দল। দুবাই থেকে মঙ্গলবার সন্ধে ৫টার পর ঢাকা বিমানবন্দরে নামে ওই প্রতিনিধি দল। জানা গিয়েছে, ওই বিমানের নম্বর EK 586। ওই প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে ছিলেন বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা DGFI-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মেহদি।
সূত্রের খবর, পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলে ছিলেন আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল অ্যানালিসিস মেজর জেনারেল শহিদ আমির আফসার। এছাড়াও আছেন মেজর জেনারেল আলম আমির আওয়ান এবং SSG কর্তা মহম্মদ উসমান লতিফ।
পাকিস্তান প্রতিনিধি দলটিকে একটি পাঁচতারা হোটেলে রাখার ব্যবস্থাও করেছিল বাংলাদেশ। সূত্রের খবর, ব়্যাডিসন ব্লু নামে একটি হোটেলে থেকেছেন পাক সেনা কর্তারা। ওই সেনাকর্তাদের একটি সফরসূচিও তৈরি করা হয়েছে। গাজিপুরে সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শনও তাঁদের কর্মসূচির মধ্য়ে আছে বলে সূত্রের খবর। অনেকগুলি বিষয় তাই চিন্তা বাড়াচ্ছে ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
কী কারণে উদ্বেগ বাড়ছে নয়াদিল্লির! পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আগমন নিয়ে কোনও ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ সেনার আইএসপিআর। বাংলাদেশের সেনাকর্তাদের পাকিস্তান সফর নিয়েও কোনও বিবৃতি ছিল না পাকিস্তান সেনার আইএসপিআরে। লেফটেন্যান্ট কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ সেনাকর্তা পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ডিজিপিআর বাংলাদেশের কর্তাদের ছবি প্রকাশ্যে আনার পরই বাংলাদেশ সেনাকর্তাদের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দেয় আইএসপিআর। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বাংলাদেশের আইএসপিআর ও ডিজিপিআর। ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছেন, এই বিষয় খবর প্রকাশ করা হলে, তা অস্বীকারও করা হতে পারে।
সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা কিন্তু কৌতূহলী। ভারতকে জবাব দিতে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার কথাওও বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক প্রভাবশালী শিক্ষক ও দেশের কয়েকজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞও। পাকিস্তানের থেকে ক্ষেপনাস্ত্র আমদানী করতে চাইছে বাংলাদেশ। এমনই মনে করছেন ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। ভারতের এক প্রাক্তন কূটনীতিকদের মতে, মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াতে ইসলামী ও বেশ কয়েকটি ইসলামি সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে। পাকিস্তান প্রেম ও ভারত বিরোধিতা, এই দুটি মোটোকে কাজে লাগিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। আইএসআই ও সেনা সেনাকর্তাদের এই সফরই বলে দেয়, পাকিস্তান এই সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত পাকিস্তান।
এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের সামরিক ক্ষেপনাস্ত্র প্রীতিকেই কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের গাজীপুরের সমরাস্ত্র কারখানায় 'শাহীন' সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর প্রস্তাবও দিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই ক্ষেপণাস্ত্র পাবে। প্রথাগত অস্ত্রের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রও বহন করতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। বাংলাদেশের হাতে এই ক্ষেপণাস্ত্র থাকলে পূর্ব ও পশ্চিম, দুই সীমান্তেই চাপে থাকবে ভারত। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সময়কাল থেকেই এই গাজিপুরের সমরাস্ত্র কারখানার কাজ শুরু হয়। ১৯৭১-এর যুদ্ধে এই কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ৩০৩ একর জমিতে ধীরে ধীরে এই অস্ত্র কারখানাটির আধুনিকীকরণ হয়। এবার পাকিস্তান সেনাকর্তারা সেই অস্ত্র কারখানাই প্রদর্শন করে গেল। ভারতীয় গোয়েন্দাদের প্রশ্ন, সেই কারণেই কি পাক কর্তাদের এই সফর নিয়ে এত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে! নাকি নেপথ্যে আরও কিছু কারণ আছে।
ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পরই কয়েকশো জঙ্গি জেল থেকে মুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে নতুন একটি ঘাঁটিও গড়ে তুলেছে আইএসআই। জঙ্গি ও জেহাদিদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে একাধিক সংগঠন। প্রশিক্ষণ চলছে। তাদের হাতে অস্ত্র, বিস্ফোরকও তুলে দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা বিভিন্ন এলাকায় স্লিপার সেলকে ফের সচলও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আইএসআই প্রধান আসিমি মালিকের সফর সিগনিফিক্যান্ট বলে মনে করছে নিরাপত্তা উপদেষ্টারা।