Rahul Dravid: কোচের পদে বহাল দ্রাবিড়, কে ফেরালেন বোর্ডের প্রস্তাব?
Randeep Hooda Wedding: ইম্ফলের ছাদনাতলায় রণদীপ হুডা, কনে যেন সাক্ষাৎ রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা
Subhuman Gill: আইপিএলে শুভমনের নতুন গুজরাতে হাতিয়ার দুই বঙ্গ ক্রিকেটার
Bengaluru Crime: প্রেমিকের গ্যালারি খুলেছিলেন, ১৩ হাজার মহিলার নগ্ন ছবি দেখে হতভম্ভ প্রেমিকা
Winter Clothes Care: দুয়ারে হাজির শীত, সোয়েটার-কম্বল ব্যবহারের আগে মাথায় রাখতেই হবে ৫ টিপস
প্রকৃত অর্থেই যুগাবসান। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে ভারতীয় রাজনীতি কেবল বেশ খানিকটা দরিদ্রই হল না, শেষ হল ইতিহাসের একটি অধ্যায়। গত শতাব্দীর ছ'য়ের দশকের শেষে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রঙ্গমঞ্চে যে বাঙালি যুবকের উল্কাসদৃশ উত্থান হয়েছিল, তাঁর পথচলা থেমে গেল ঠিকই, কিন্তু রয়ে গেল এক আশ্চর্য রূপকথা। যে রূপকথায় নায়ক একজন খর্বকায় বাঙালি। আশ্চর্য বাস্তববুদ্ধি আর প্রখর মেধায় ভর করে যিনি বীরভূমের কীর্ণাহার থেকে পৌঁছে গিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত।
সময়টা ছ'য়ের দশকের শেষভাগ। পশ্চিমবঙ্গে চলছে প্রবল রাজনৈতিক ডামাডোল।কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হয়েছে বাংলা কংগ্রেস। নেতৃত্বে অজয় মুখোপাধ্যায়। নবগঠিত এই দল বামপন্থীদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করল রাজ্যে। সেটা ১৯৬৭ সাল। টানা দু'দশকের কংগ্রেস রাজত্বের অবসান ঘটল। সেই যুক্তফ্রন্ট সরকার অবশ্য টিঁকল না। দু'বছর পরে আবার ক্ষমতায় এল যুক্তফ্রন্ট। ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে নকশাল আন্দোলন। প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে রাজপথ। এই উত্তাল সময়েই রাজনীতিতে পা ফেলা শুরু করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। যোগ দিলেন বাংলা কংগ্রেসে।
১৯৬৯ সালের একটি উপনির্বাচন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাংলা কংগ্রেসের সমর্থনে মেদিনীপুরের একটি কেন্দ্রে প্রার্থী হলেন ভি কে কৃষ্ণ মেনন। হেভিওয়েট প্রার্থী সন্দেহ নেই, কিন্তু জয়ের বিষয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল কংগ্রেস। কারণ কৃষ্ণ মেনন তো বাঙালি নন, মালয়ালি। গ্রামবাংলার মানুষ তাঁকে ভোট দেবে কেন!
প্রণব তখন বাংলা কংগ্রেসের মাঝারি মাপের একজন নেতা। দলের নির্দেশে তিনি কৃষ্ণ মেননের নির্বাচনী এজেন্ট হলেন। চষে ফেললেন গ্রামের পর গ্রাম, তৈরি করলেন দুর্ভেদ্য প্রচারকৌশল। সকলকে অবাক করে জিতেও গেলেন কৃষ্ণ মেনন। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গেল প্রণবকে নিয়ে। তিনিই তো এই জয়ের প্রধান কারিগর!
মেধাবী যুবকটি নজর কাড়লেন স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধির। ইন্দিরাই প্রণবকে নিয়ে এলেন কংগ্রেসে। লৌহমানবী বুঝেছিলেন, খর্বকায় বাঙালি যুবকটি লম্বা রেসের ঘোড়া। গ্রামবাংলা বা শহর কলকাতা নয়, তাঁর বিচরণক্ষেত্র দেশের রাজনীতির সর্বোচ্চ মহল। ইন্দিরাই প্রণবকে পাঠালেন রাজ্যসভায়। ১৯৬৯ সালে। সেই প্রথম প্রণববাবুর ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতির চৌকাঠে পা রাখা। পরবর্তী ৫০ বছরে দিল্লির রাজনীতির ওঠাপড়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিলেন তিনি।
১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৯ সালেও রাজ্যসভার সাংসদ হন প্রণব। ১৯৭৩ সালে শিল্পোন্নয়ন উপমন্ত্রী হিসাবে প্রথম কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে জায়গা করে নেন তিনি। ১৯৮২ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ভারতে সর্বকনিষ্ঠ অর্থমন্ত্রী হন প্রণব। তার দু'বছর পর হত্যা করা ইন্দিরা গান্ধিকে। রাজীব গান্ধির আমলের শুরুতে কংগ্রেসে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেস ছেড়ে তৈরি করেন নতুন দল - রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস। কিন্তু এই বিচ্ছেদ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮৯ সালে আবারও কংগ্রেসে ফেরেন প্রণব।
পি ভি নরসিমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে প্রণব প্রথমে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। পরে রাও ক্যাবিনেটে বিদেশমন্ত্রী হন তিনি।
২০০৪ সালে ইউপিএ সরকার তৈরি হলে প্রণব মুখোপাধ্যায় একসঙ্গে তিনটি মহাগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন৷ তিনি তখন একাধারে অর্থমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তাঁর আগে কেউ এই পর্যায়ের এতগুলি মন্ত্রকের দায়িত্ব একসঙ্গে পাননি। এই বছরই প্রথম তিনি সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সাংসদ হন। মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর থেকে লোকসভায় যান প্রণব।
দিল্লিতে সক্রিয় হলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে প্রণবের গুরুত্ব ছিল অনন্য। জ্যোতি বসু সহ বিরোধী বামপন্থী নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিল দাদা-বোনের সম্পর্ক। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
২৫ জুলাই, ২০১২। আপামর বাঙালির কাছে অত্যন্ত গর্বের একটি তারিখ। বীরভূমের বঙ্গসন্তান প্রণববাবু বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। তারপরেই ৫ বছর সাফল্যের সঙ্গে সেই মহাদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি পদে কার্যকালের মেয়াদ ফুরোলেও সক্রিয় ছিলেন প্রণব। প্রথম কংগ্রেস নেতা হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন আরএসএসের দশেরা অনুষ্ঠানে। তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রণব আজীবন বিশ্বাস করেছেন বহুত্ববাদে।
প্রণবের মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হল। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্রের পথচলা থেমে গেল। আর বাংলা হারাল তার এক কৃতি সন্তানকে।