RG Kar Case : মর্গেও দুর্নীতি, মৃতদেহের সঙ্গে সহবাস সঞ্জয়ের, আর জি করে চলত পর্নোগ্রাফির চক্র ?

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল যেন দুর্নীতির আখড়া । দিনের পর দিন ধরে হাসপাতালে একাধিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । নিয়োগ, বদলি, প্রমোশন থেকে বেড, ওষুধ, সরঞ্জাম...সব জায়গায় দুর্নীতি । বাদ যায়নি মৃতদেহ । লাশ কাটা ঘরে অর্থাৎ মর্গে দিনের পর দিন চলত কু-কীর্তি । মৃতদেহ নিয়ে চলত দুর্নীতি । তদন্তে নেমে এমনই তথ্য উঠে এসেছে সিবিআইয়ের হাতে ।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, মর্গে প্রায় নিত্য যাতায়াত ছিল আর জি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের । অভিযোগ, মর্গে গিয়ে মৃতদেহের সঙ্গে সহবাস করত সঞ্জয় আর ভিডিও তুলে রাখত মোবাইলে । উল্লেখ্য সঞ্জয়ের গ্রেফতারির পর তার মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ । সেইসময় পুলিশ জানিয়েছিল, ধৃতের মোবাইল থেকে প্রচুর পর্নোগ্রাফির ভিডিও পাওয়া গিয়েছে । পরে, সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার আসার পর গোয়েন্দারা মনে করছেন, শুধু পর্নোগ্রাফি নয়, 'বিকৃত' পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত সঞ্জয় । চিকিৎসকদের পরিভাষায় যাকে বলা হয় 'নেক্রোফিলিয়া' । এটা একটা মানসিক রোগ । নেক্রোফিলিয়াতে আক্রান্ত সঞ্জয় ।

আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্তকারীদের দাবি, সঞ্জয়ের মোবাইল থেকে যে পর্নোগ্রাফির ভিডিও উদ্ধার হয়েছে, তার বেশ কিছু ভিডিও হাসপাতালের মর্গে তোলা । সিবিআই সূত্রে খবর, রাত হলেই মর্গে যেত সঞ্জয় । কিন্তু, রাতে ময়নাতদন্ত হত না । তাহলে এত রাতে কীভাবে মর্গ খোলা থাকে ? আর কীভাবে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের অবাধ যাতায়াত থাকতে পারে মর্গে ? তাহলে কী এর পিছনে অন্য কেউ ছিল ? তাছাড়া, মৃতদেহের সঙ্গে সঞ্জয়ের সহবাসের ছবি কেই বা তুলে দিত ? আদৌ কি সঞ্জয় নেক্রোফিলিয়া-তে আক্রান্ত ছিল, নাকি বড় কোনও পর্ণগ্রাফির চক্র চলত মর্গে ? এমনই সব প্রশ্ন উঠে আসছে ।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সঞ্জয় ছাড়াও মর্গে নাকি রাত বাড়লেই আর জি করে দাপিয়ে বেড়ানো সিন্ডিকেটের কয়েক জনের নিত্য যাতায়াত ছিল । এমনই দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার । তাহলে কি তারাই সঞ্জয়ের সহবাসের ছবি তুলে দিত ? মোটা টাকায় সেসব ভিডিয়ো বিদেশে বিক্রি করা হত বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের ।

ওই সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এক মৃতদেহ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে আরও একটি ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে । মৃতদেহ, দেহাংশের হিসেবে গরমিলের অভিযোগ । বছরের পর বছর ধরে বহু দেহের হিসেব পাওয়া যায়নি । হাসপাতাল সূত্রে দাবি, ২০২১ সাল থেকে কয়েক বছরের প্রায় প্রতিটি অর্থবর্ষেই অন্তত ৬০-৭০টি করে দেহের হিসাব পাওয়া যায়নি । মর্গের খাতায় হিসেব গরমিলের অভিযোগ রয়েছে । ইতিমধ্যেই সেই খাতা থেকে মর্গের শেষ কয়েক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে সিবিআই । মর্গে এই মৃতদেহের দুর্নীতিতে উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেটের প্রভাবের অভিযোগ রয়েছে । অভিযোগ, দুর্নীতির মোটা টাকা পৌঁছে যেতে সিন্ডিকেটে । মর্গের হেড-হোম বদলি থেকে নতুন হেড হোম নিয়োগ করা, সন্দীপ ঘোষের অঙ্গুলি হেলনেই এসব কিছু ঘটত বলে দাবি তদন্তকারীদের ।

মর্গে কীভাবে চলত দুর্নীতি ?

মর্গ সাধারণত, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয় । মর্গের মূল কার্যালয়ে সব কোল্ড চেম্বারের চাবি রাখা থাকে । মূল দরজার চাবি থাকত হেড ডোমের কাছে । তবে, রাতে প্রায়ই মর্গের আলো জ্বলতে দেখা যেত । অভিযোগ, সেইসময় কোল্ড চেম্বার খুলে মৃতদেহ বার করে চলত কুকীর্তি । মদের বোতলও পাওয়া গিয়েছে মর্গ থেকে । এর পিছনে কাজ করত উত্তরবঙ্গ সিন্ডিকেট ।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, ইনটার্ন, হাসপাতাল কর্মী সহ মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ । অভিযোগ, ওই ১২ জন হাসপাতালে থ্রেট কালচার চালাতেন। তাঁদের বহিষ্কৃত করা হয়েছে । এমনকি নম্বর বাড়ানোর মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গেও কয়েকজন জড়িত ছিল বলে অভিযোগ ।

জানা গিয়েছে যে ১২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন গ্রুপ A অফিসার, তিনজন হাউস স্টাফ, একজন ইন্টার্ন এবং পাঁচজন ছাত্র। যে পাঁচজন ছাত্র জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের ডিস-কলেজিয়েট করা হয়েছে। ফলে তাঁরা মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি কোনও কাজেই অংশ নিতে পারবে না। ওই ৫জনকে হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গিয়েছে।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ইন্টার্নকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এবং হাউস স্টাফদের বহিষ্কার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি মেডিক্যাল কাউন্সিলে জানানো হয়েছে।