ফ্রান্স সফর শেষ। বুধবারই ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। ওই বৈঠকে অনেকগুলি বিষয় উঠে আসতে পারে। যার দিকে নজর থাকবে নয়াদিল্লির। কী কী বিষয় উঠে আসবে! আমেরিকায় ক্ষমতায় ফিরেই বিভিন্ন নীতি নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসন নীতি, শুল্কনীতি নিয়ে চাপ বাড়ছে ভারতের। কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি
ক্ষমতায় আসার পরই অভিবাসন নীতি নিয়ে কড়া হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম দফায় ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয়কে দেশে পাঠানো হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে কতজন ভারতীয় মার্কিন প্রশাসনের তালিকায় আছে, তা নিয়ে সংশয় আছে। ৪৮৭ জন অবৈধবাসী ভারতীয় নাগরিক ট্রাম্প প্রশাসনের তালিকায় আছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে কি কোনও রফাসূত্র আনতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী! তার দিকে কিন্তু নজর থাকবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি
ট্রাম্পের শাসনে আগেও ভারত-আমেরিকা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের আগে নয়া শুল্কনীতি ঘোষণা করেছেন নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওয়াশিংটনে মোদী-ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে শুল্কনীতি নিয়ে রফাসূত্র উঠে আসবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তার জেরেই ভারতীয় বাণিজ্যে বড়সড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাণিজ্য নিয়ে বার্তা মোদীর
ইন্ডিয়া-ফ্রান্স CEO ফোরামে বাণিজ্য নিয়ে বড় বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্যারিসে ও সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, "ভারতে বিনিয়োগ করার সেরা সময় এটি। প্রত্যেকের উন্নয়ন ভারতের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে। এভিয়েশন সেক্টরে ভারতীয় সংস্থাগুলির কাছে এরোপ্লেনের বিরাট অর্ডার এসেছিল। এবার আমরা ১২০টি নতুন এয়ারপোর্ট চালু হচ্ছে। ভবিষ্যতে সম্ভাবনা কী হবে, তা কল্পনা করতে পারছেন।"
তবে এই বৈঠকের আগে আরও একটি তত্ত্ব উঠে আসছে। যা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে কূটনৈতিক মহল। মার্কিন প্রশাসনের প্রাক্তন অফিসার মাইক বেনজ দাবি করেছেন, ভারত ও বাংলাদেশে সরকার বিরোধী প্রচারে ফান্ড দিয়ে সহযোগিতা করেছে US এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা USAID। বাংলাদেশে মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্স, সোশ্যাল মিডিয়া সেন্সরশিপ, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারে সাহায্য করেছে মার্কিন এজেন্সি। ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনেও এই এজেন্সি কাজ করেছে বলে দাবি তাঁর। তবে মাইক বেনজের দাবি, ভারতে নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক সাফল্যের নেপথ্যে কাজ করেছে USAID। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টুইটারের মতো টেক জায়ান্টদের প্ল্যাটফর্মগুলিও বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীকে প্রমোট করেছে। তার ফান্ডিং করেছে USAID। ২০১৯ নির্বাচনের আগে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ফরোয়ার্ডিংয়ে লিমিটেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে আখেরে লাভ হয় বিজেপি ও মোদী সমর্থকদের।
তবে বর্তমানে সমীকরণটা পাল্টেছে। মাইক বেনজের দাবি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে USAID এবার অ্য়ান্টি মোদী ক্যাম্পেন শুরু করেছে। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক ভাল থাকা সত্ত্বেও স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও এজেন্সিগুলি মোদী বিরোধী ক্যাম্পেন শুরু করেছে। তাঁর দাবি, সাইবার পলিসিগুলির দিকে নজর রাখছে এজেন্সি। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া কম্পানিগুলিকে কন্টেন্ট মডারেশনে স্ট্র্যাটেজিতে বদল আনার নির্দেশ দিয়েছে USAID। জাতীয়তাবাদী দলগুলির আন্দোলন বিশ্বজুড়ে সীমিত করে দিতে চাইছে মার্কিন এজেন্সি। তবে মাইক বেনজ কিন্তু সরাসরি কোনও ভারতীয় রাজনৈতিক দলের নাম নেয়নি। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচনের আগে মার্কিন এজেন্সির কাছে এই নিয়ে আর্থিক ও স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান চাওয়া হয়েছিল। একই ভাবে বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের পতনের নেপথ্যেও আছে USAID।