ঘোর অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এরই মধ্যে দেবী পক্ষ পড়ছে, অকাল বোধনের জন্য তৈরি হচ্ছে প্রকৃতি। কলকাতার আকাশেও শরতের রোদ উঠছে, কিন্তু উৎসবের মেজাজ খানিকটা ফিকে। কলকাতা থেকে কয়েক হাজার মাইল দুরে একটু একটু করে তৈরি হচ্ছে আরেকটা কলকাতা, যে কলকাতা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।
আমেরিকার নিউজার্সিতে ত্রিনয়নীর এই বছরের পুজোর থিম 'সিটি অফ জয়'। কলকাতার বুক থেকেই রোজ একটু একটু করে খসে পড়ছে পুরনো কলকাতা, প্রাণের সেই শহরের আমেজ হারিয়ে কলকাতা হয়ে উঠছে স্মার্ট, আর ক্রমশ বাতিল হতে থাকা বুড়ো কলকাতাকেই উৎসবের লগ্নে আঁকড়ে ধরছে 'ত্রিনয়নী'।
বইয়ের পাতা থেকে যেন একটু একটু করে জীবন্ত হয়ে উঠছে পুরনো কলকাতা।হাওড়া ব্রিজ-ভিক্টোরিয়া-দক্ষিণেশ্বর প্রাণ পাচ্ছে প্রবাসের পুজোয়। প্রতিমা নির্মাণ থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, আলপনা দেওয়া- পুজোর যাবতীয় কাজ প্রতি বছরের মতো এবারেও নিজেরাই করেছেন সদস্যরা। পেশাগত ব্যস্ততা সামলে, দিন রাত এক করে নিউ জার্সিতে বসে তৈরি করে ফেলছেন একটা আস্ত শহর। কলকাতার রাস্তা থেকে মুছে যাচ্ছে ট্রাম লাইন। আর সে বছরেই 'ত্রিনয়নী'র পুজোর চালচিত্রে জায়গা করে নিচ্ছে ট্রাম-বাস-রাস্তা-ঘাট, হলুদ ট্যাক্সি, হাতে টানা রিকশা।
উৎসব আসলে যতটা না উদযাপনের, তার চেয়ে অনেক বেশি ফেরার। নিজের শিকড়ের কাছে ফেরার, স্মৃতির কাছে, শৈশবের কাছে ফেরার। তর্পনও তো তাই, অতীতকে স্মরণ, সে-ও তো স্মৃতিই। নিজের ভিটে মাটি থেকে অনেকটা দূরে থাকা মানুষগুলোর মন, এই শরতে পড়ে থাকে নিজের ঘরে, কাজ ফেলে ঘরে ফেরা হয় ক'জনের? তাই, একটু একটু করে ওদের কল্পনায় বেড়ে উঠতে থাকে স্বপ্নের শহর সিটি অফ জয়!
১২ এবং ১৩ অক্টোবর দশভুজার আরাধনা হবে মহাসমারোহে। দেশের মাটি নেই, তাতে কী! মনে দেশের জন্য টান তো ষোলআনা। খাওয়াদাওয়া, দেদার আড্ডা, গানবাজনা, নাটক, ধুনুচি নাচ সবই থাকবে ওদের পুজোয়। বাংলার জনপ্রিয় শিল্পীদের পারফরম্যান্স থাকবে। পুজোর থিমে থিমে শিকড় চিনে নেওয়াও থাকবে কচিকাঁচাদের। বিস্মৃতির সব আগাছা উপড়ে বছরের এই দুটো দিনই আসলে নিজের কাছে ফেরার দিন।