২০২২! বিগত দু'বছর ধরে অতিমারীতে ধুকতে থাকা একটা পৃথিবী স্বপ্ন দেখছিল নতুন করে শুরু করার। ক্লান্ত, অবসন্ন দুটো বছর কাটিয়ে একটু একটু করে ক্ষত ভুলছিল মানুষ। নতুন বছরে ওঠা প্রথম সূর্য জানত না, সামনেই আরও ভয়ঙ্কর দিন। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হাতে হাত রাখা যায়, কিন্তু মানুষই যখন লড়ে মানুষের বিরুদ্ধে? দেশ, আরেক দেশের বিরুদ্ধে? এক মাস ধরে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ! খবরের কাগজে, টিভিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় রোজ ভয়াবহতার নতুন ছবি। রক্ত-কান্না-হাহাকার-মৃত্যু মিছিল। সদ্য অতিমারী পেরনো পৃথিবী আরও রিক্ত হল। মানবতার ক্ষয় হল আরও অনেকখানি।
এর আগে বেলারুশে চার দফা বৈঠক সত্তেও ‘শান্তির পথ’ খোলেনি। কিন্তু তুরস্কে মঙ্গলবার রাশিয়া-ইউক্রেনের আলোচনা শুরুর পরেই নাটকীয় পটপরিবর্তন। যুদ্ধের ৩৪তম দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিভ এবং চেরনিহিভ শহর দখলের অভিযানে আপাতত রাশ টানতে সম্মত হল রাশিয়া।
মঙ্গলবারই ইস্তানবুলে ইউক্রেন এবং রাশিয়ান কূটনীতিকদের মধ্যে আলোচনায় সমাধান সূত্রে হচ্ছে বলে আভাস দেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। ইউক্রেনের তরফে বলা হয় ফের এক দফা আলোচনায় বসতে পারেন জেলেনস্কি ও পুতিন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইউরোপের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে ফোনে আলোচনা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
আলোচনায় বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে উভয় পক্ষ। রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। অন্য দিকে, ইউক্রেন স্থিতাবস্থার পক্ষে রাজি হয়ে জানিয়েছে ন্যাটো চাই না, তার বদলে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সুরক্ষা, নিরাপত্তা চায় তাঁরা। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত মিলতেই তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছে। বাজারও চাঙ্গা হয়েছে।
ইতিমধ্যে, নেদারল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, আয়ারল্যান্ড এবং পোল্যান্ড সহ ইওরোপের বেশ কয়েকটি দেশে রুশ গুপ্তচর সন্দেহে সে সব দেশে কর্মরত বেশ কয়েকজন রুশ ডিপ্লোম্যাটকে বহিষ্কৃত করেছে।
যে নেটো-তে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তৎপরতাকে যুদ্ধের ‘অন্যতম কারণ’ হিসেবে প্রকাশ্যে চিহ্নিত করেছে মস্কো, যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুরস্ক। তুরস্কেরই হস্তক্ষেপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন দখলের অভিযানে সাময়িক ইতি টানতে রাজি হলেন, এর পেছনে তার নানা ‘ব্যাখ্যা’ শোনা যাচ্ছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মুখে।
দেড় বছর আগেও একই ভাবে মস্কোর উপর আঙ্কারার ‘প্রভাব’ দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালে আজেরবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে আজেরবাইজানকে সামরিক সহযোগিতার ঘোষণা করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে পুতিনের সমর্থন সত্ত্বেও দু’মাসের যুদ্ধে আর্মেনিয়া কোণঠাসা হয়ে পড়ে শান্তির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল। অনেকের মতে, রাশিয়ার উপর তুরস্কের এই প্রভাবের পিছনে রয়েছে ভৌগলিক অবস্থান।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ইউক্রেনের মাটিতে আক্রমণ শুরু করেছিল রাশিয়া। পুতিনের দাবি ছিল, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জমানায় ইউক্রেনের মাটিতে ‘রুশ গণহত্যা’ রুখতেই এ হামলা। এ ছাড়া, ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাত থেকে বেদখল হওয়া ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক বলেও দাবি করেছিলেন পুতিন।