মধ্যরাতের নাটকে অবশেষে যবনিকা পতন । পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত ইমরান খান (Imran Khan) । পাক অ্যাসেম্বলিতে (Pakistan Assembly) তাঁর বিরুদ্ধে ১৭৪টি ভোট পড়েছে । উল্লেখ্য, ৩৪২ আসন বিশিষ্ট পাক অ্যাসেম্বলিতে ম্যাজিক ফিগার ১৭২ ।
৬৯ বছরের ইমরান খান ভোটাভুটির সময় অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত ছিলেন না । জানা গিয়েছে, ভোট প্রক্রিয়া শুরুর মুখেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে হেলিকপ্টারে চেপে ইসলামাবাদ ছেড়েছেন ইমরান । রাজনীতিবিদদের মতে, ফলাফল কী হতে চলেছে, তার আন্দাজ আগেই করতে পেরেছিলেন ইমরান । এদিকে, অ্যাসেম্বলি থেকে তাঁর দলের সংসদ সদস্যরা ওয়াকআউট করেন । অন্যদিকে, নতুন পাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সদ্য প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরিফ (Shehbaz Sharif) ।
৩৪২ আসনের পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে(Pakistan National Assembly) ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে বিরোধীদের দরকার ছিল ১৭২ ভোটের । কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরও ২টি ভোট বেড়ে তা দাঁড়ায় ১৭৪-এ । উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়নি । ইমরান খান হলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যাঁর ভাগ্য আস্থা ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে । এছাড়াও, পাকিস্তানের কোনও প্রধানমন্ত্রী কখনও পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেননি ।
আরও পড়ুন, Shehbaz Sharif : ইমরানের পর পাকিস্তানের গদিতে বসতে পারেন শাহবাজ শরিফ, কে এই শাহবাজ, জানেন ?
শনিবার পাকিস্তানে রাত ১২টার আগে পর্যন্ত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল রাত ১২টার মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে । কিন্তু, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত হননি ইমরান । চরম নাটকীয় ভাবে স্পিকার আসাদ কাইসার এবং ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেন । স্পিকার জানিয়ে দেন, ইমরানের সঙ্গে তিনি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’করতে পারবেন না । পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চেয়ার প্যানেলের সদস্য আয়াজ সাদিককে স্পিকারের দায়িত্বে মনোনীত করা হয় । এরপরই আস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয় । এরই মাঝে মধ্যরাতে দুই-তিন মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতুবি হয় । এরপর রবিবার ভোর রাতে শেষ হয় ভোটের প্রক্রিয়া । ইমরান খানের বিরুদ্ধে ১৭৪টি অনাস্থা ভোট পড়ে । পতন হয় ইমরান সরকারের ।
প্রসঙ্গত, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী জোট। যদিও তা খারিজ করে দেন ন্যাশনাল অ্য়াসেম্বলির স্পিকার কাসিম খান সুরি । তাঁর যুক্তি, বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তা সংবিধান বিরোধী । দেশের পক্ষে ক্ষতিকর । তাই সংবিধানের ৫ নম্বর ধারায় ভোটাভুটি করতে দেওয়া সম্ভব নয় । এরপরই ইমরানের সুপারিশে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন পাক প্রেসিডেন্ট আলভি । তার প্রতিবাদে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধী নেতৃত্ব । স্বতঃপ্রনোদিত মামলা দায়ের করে সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানি হয় । এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দেয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক । শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ন্যাশনাল অ্য়াসেম্বলিতে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে ইমরান খানকে ।