তাদের দেশে যে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল, তা এবার কার্যত স্বীকার করে নিল বাংলাদেশের উপদেষ্টা সরকার। সরকারি বিবৃতিতে দিয়ে জানাল হল, এখনও পর্যন্ত ৮৮টি মামলায় কমপক্ষে ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হল। কূটনৈতিক মহলের দাবি, ভারত এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্রবল চাপের কাছে অবশেষে বিবৃতি দিতে হল বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর অভিযোগ কার্যত খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি বাংলাদেশ গিয়েছিলেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। প্রথমে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব জসীমউদ্দিন এবং পরে উপদেষ্টা সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি। ওই বৈঠকে দিল্লির বার্তা স্পষ্ট করেছিলেন ভারতের বিদেশ সচিব।
ওই বৈঠকেই দিল্লি স্পষ্ট করে দিয়েছিল, বাংলাদেশে থাকা হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ইউনুস সরকারকে আর্জি জানায় দিল্লি। দিল্লির এই অনুরোধের পরেই কার্যত গ্রেফতারি নিয়ে কথা প্রকাশ করতে হল ঢাকাকে।
সেদেশের হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই দাবি করেছে। উপদেষ্টা সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত ৫ অগাস্টের পর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত যে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতেই এই গ্রেফতারি।
কূটনৈতিক মহলের দাবি, এই গ্রেফতারির ঘটনায় স্পষ্ট বাংলাদেশ সরকার কার্যত স্বীকার করল, তাদের দেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল। যদিও ২২ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা কিন্তু স্পষ্ট করেনি উপদেষ্টা সরকার।
গত ২৬ নভেম্বর ঢাকা বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে। এখনও তিনি চট্টগ্রাম জেলে বন্দি। আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন তাঁর দুই আইনজীবীও। এই ঘটনার পর থেকেই গত কয়েকদিন বাংলাদেশের একাধিক জেলা থেকে উঠে এসেছে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ।
প্রাথমিক ভাবে এই ঘটনার কথা মানতে চায়নি মহম্মদ ইউনুসের সরকার। কিন্তু ভারত এবং আন্তর্জাতিক চাপের কাছে পরবর্তী সময়ে খানিকটা সুর নরম করতে হয়। কূটনৈতিক মহলের মতে, ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের পর হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এই বিবৃতি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
ঢাকায় মহম্মদ ইউনুসের প্রেসসচিব মহম্মদ শাফিকুল আলম জানিয়েছেন, গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে মোট ৮৮টি অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনার গ্রেফতারি আরও হতে পারে।
এই ঘটনায় বারে বারে অভিযোগ উঠছে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে। সরকারের প্রেসসচিব জানিয়েছেন, গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক রং দেখা হবে না। যখন সরকারি এই উদ্যোগ, তখনও ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের বাণী জারি রেখেছে বিএনপি। ছাত্র, যুব এবং স্বেচ্ছাসেবক- তাদের তিন বাহিনী লংমার্চের ডাক দিয়েছে। ঢাকার পল্টন থেকে আগরতলা পর্যন্ত এই মিছিল করবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি।