হোয়াইট হাউস ছেড়েছিলেন ২০২০ সালে। তার ঠিক চারবছর পর ফের সেই কার্যালয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে কমলা হ্যারিসকে। কিন্তু হারের পিছনে কারণ কী?
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে আমেরিকার যে সব অঙ্গরাজ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সেখানে আমেরিকানরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার পিছনে রয়েছে সেই দেশের অর্থনীতি এবং অভিবাসনের মতো একাধিক ইস্যু। অন্যদিকে কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রচারের জন্য যেমন তুলনামূলক কম সময় পেয়েছেন কমলা হ্যারিস তেমনই অর্থনীতি নিয়েও আমেরিকানদের খুশি করতে পারেনি জো বাইডেনের দল। এমনই মত রাজনৈতিক মহলের। কমলা হ্যারিসের হারের পিছনে কী কী রয়েছে? জেনে নিন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ-
অর্থনীতির সমস্যা-
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার অর্থনীতি যে খুব মজবুত এমনটা বলা যায় না। মূদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে সেখানে। কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী ভাষণ এবং বিতর্ক সভায় সেই ভাবে আমেরিকাবাসীর আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এমনকি, এক্সিট পোলেও প্রকাশিত হয়েছিল, অর্থনীতির প্রশ্নে ট্রাম্পের উপরই বেশি ভরসা করছেন ভোটাররা।
প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েল যুদ্ধ-
কমলা হ্যারিসের হারের পিছনে প্রায় একবছর ধরে চলতে থাকা প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েলের যুদ্ধ-ও একপ্রকার দায়ী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। চলতি বছরে জুলাই মাসে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানেয়াহুকে কমলা হ্যারিস জানিয়েছিলেন, প্যলেস্তাইনের সঙ্গে চলতে থাকা যুদ্ধ নিয়ে চুপ থাকবেন না তিনি। তাঁর বক্তব্য, প্যালেস্তাইনের আক্রমণের মুখে প্রতিরোধ করার অধিকার আছে ইজরায়েলের। এছাড়াও হিজবুল্লা নেতা হাসান নাসারাল্লা-র মৃত্যুতেও ইজরায়েলকে সমর্থন জুগিয়েছিলেন কমলা।
কমলা হ্যারিসের ওই মন্তব্যের পর আমেরিকায় বসবাসকারী আরবিয়ানরা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাধিক সংগঠন তীব্র নিন্দা করেছিল। ওই সংগঠনগুলি জানিয়েছিল, যুদ্ধ থামানোর কোনও মনোভাব নেই কমলা হ্যারিসের।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কমলা হ্যারিসের ইজরায়েলের সমর্থনের মন্তব্যগুলি ভালো ভাবে নেননি আমেরিকায় বসবাসকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। ফলে ডেমোক্রাটদের দিকে না গিয়ে রিপাবলিকানদের সমর্থন দিয়েছেন তাঁরা।
ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন
বর্তমানে মিনসোতার গর্ভনর পদে রয়েছেন টিম ওয়াল্জ। নির্বাচনী প্রচারে কমলা হ্যারিস জানিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে টিম ওয়াল্জ-কে ভাইস প্রেসিডেন্ট করা হবে। যা নিয়ে ডেমোক্রাটদের অনেক নেতা ও কর্মী সমর্থক প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের দাবি ছিল, টিম ওয়াল্জকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না করে পরিবর্তে পেনিসেলভেনিয়ার গর্ভনর জোশ স্যাপরিওকে প্রার্থী করা হোক। তাঁদের দাবি ছিল, পেনসেলভিয়ার নির্বাচন জেতা তুলামূলক কঠিন। সেই কারণে স্যাপরিওকে প্রার্থী করা হলে তার সুফল তুলতে পারবে ডেমোক্রাটরা। যদিও সেই পরামর্শ কানে তোলেননি কমলা হ্যারিস।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচার
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছিলেন কমলা হ্যারিস। ম্যাক্সিকো সীমান্ত নিয়েও ট্রাম্পের সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। যা আমেরিকানরা খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। তাঁদের বক্তব্য়, আর সেই কারণেই কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন ভোটাররা।
নির্বাচনী প্রচারের কম সময়
কমলা হ্যারিস সেভাবে নির্বাচনী প্রচারের সময় পাননি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মাত্র ৪ মাস নির্বাচনী প্রচার করেছিলেন কমলা হ্যারিস। সেই সময়ের মধ্যে আগামী চারবছরে সরকারের পরিকল্পনা কী কী এবং সরকার পরিচালনার রূপরেখা কেমন, তা আমেরিকার বাসিন্দাদের বোঝাতে সেই ভাবে সফল হননি কমলা হ্যারিস। নির্বাচনী পরাজয়ের পিছনে এটাও বড় কারণ হিসেবে গণ্য করছে রাজনৈতিক মহল।