কাতার ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক, উদ্বেগ এবং আশঙ্কার অন্ত ছিল না। স্টেডিয়ামে বিয়ার পাওয়া যাবে, খোলামেলা পোশাক পরা যাবে না, প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া যাবে না- এমন অসংখ্য বিধিনিষেধের জেরে 'গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ' তার আসল মজাটাই হারিয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছিলেন অনেকেই। কিন্তু কোথায় কী! বিশ্বকাপের বল গড়াতে শুরু করার পর থেকেই ক্রমশ হালকা হতে শুরু করেছে বিতর্কের মেঘ। ইতিউতি বেশ কিছু অসন্তোষের কথা শোনা যাচ্ছে বটে, কিন্তু সার্বিকভাবে কাতারে এখন এক অন্য 'আরব বসন্ত'। যে বসন্তের নায়ক শুধুই ফুটবল। মেসি, নেইমার, এমবাপেদের পায়ের জাদু দেখতে ব্যগ্র গোটা পৃথিবী। ফুটবলের প্রতি সেই মুগ্ধতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন দেশ -বিদেশ থেকে গিয়ে কাতারে ভিড় জমানো সমর্থকেরা। নাচে, গানে, উৎসবে, আনন্দে, বিষাদে, উচ্ছ্বাসে স্টেডিয়াম মাতিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। কেবল গ্যালারিতে নয়, ফ্যান জোনেও উপচে পড়ছে ভিড়। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মতো বড় দলগুলির সমর্থকেরা তো বটেই, ম্যাচের ভ্যেনু মাতিয়ে দিচ্ছেন সেনেগাল, মরক্কো, মেক্সিকোর মতো দেশগুলির সমর্থকেরাও। মেসির আর্জেন্টিনাকে সৌদি আরব হারিয়ে দেওয়ার পর এই উচ্ছ্বাস বাড়তি মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। বিশ্বফুটবলের রঙ্গমঞ্চে শোনা যাচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার স্পর্ধিত গর্জন। দলে দলে সীমান্ত পেরিয়ে পড়শি দেশে চলে আসছেন সৌদি নাগরিকরা।
কয়েকটি ম্যাচে স্টেডিয়ামে বিয়ার রাখার দাবিতে ভিন্ দেশ থেকে আসা সমর্থকেরা স্লোগান দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু স্টেডিয়ামের আশেপাশে ইতিউতি বিয়ার হাতে সমর্থকদের দেখাও মিলেছে। গ্যালারিতে প্রিয় দলের জার্সি গায়ে ঠোঁটে ঠোঁট মেলাচ্ছেন প্রেমিক-প্রেমিকা- এমন ছবিরও দেখা মিলেছে। ইংরেজ সমর্থকদের একাংশের সঙ্গে প্রশাসনের গোলমালের যে ছবি অন্য বিশ্বকাপে ধরা পড়ে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লাতিন আমেরিকার দুই মহাশক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার রেষারেষিও তুঙ্গে। আর্জেন্টিনার গ্যালারিতে ব্রাজিলকে বিদ্রুপ করে ব্যানার ঝুলেছে। ইকুয়েডরের সমর্থকদের সঙ্গে কাতারের সমর্থকদের বচসাও যেমন হয়েছে, তেমনই সেই বচসা ম্যাচের শেষে মিটে গিয়েছে পারস্পরিক আলিঙ্গনে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ আছে বিশ্বকাপেই। চেনা ছন্দে, চেনা উন্মাদনায়।