কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের গ্লানি এখনও কাটেনি। গোটা টুর্নামেন্টে দাপিয়ে খেলেছিল ফ্রান্স। লুসাইল স্টেডিয়ামের সেই যন্ত্রণার রাত অনেক কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১৬ সালের ইউরো কাপ ফাইনালের যন্ত্রণাও কিন্তু কম নয়। সেবারও পর্তুগালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময় গিয়ে হারতে হয়েছে। সালটা ছিল ২০০০। সেবার জিদান-অঁরির হাত ধরে ইউরো জয় করেছিল ফ্রান্স। সেই শেষবার আর্ক দ্য ত্রিয়োমফ থেকে আইফেল টাওয়ার, মেতে উঠেছিল ইউরো জয়ের উচ্ছ্বাসে। এরপর কেটে গিয়েছে অনেক বছর। সেই লে ব্লুজে অনেক কিছু পাল্টেছে। ২০১৮ সালে আরও একবার বিশ্বকাপ জয় নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে। এবার এমবাপে, গ্রিয়েজম্যানদের হাত ধরে ২৪ বছর পর আরও একবার ইউরো জয়ই লক্ষ্য ফ্রান্সের।
এবার জার্মানিতে ইউরো কাপের আসর বসছে। ফরাসি ফুটবলের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই জার্মানির মঞ্চেই ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ফ্রান্সের। ২০১৬ ও ২০২২-এর মতো ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালও আরও একটা যন্ত্রণার রাত। অলিম্পিয়া স্টেডিয়ামে সেবার ফাইনাল খেলতে নামবে ফ্রান্স, তা বোধ হয় ভাবতে পারেনি কোনও ফুটবলপ্রেমী। কিন্তু ভাগ্যের কাছে হারতে হয় ফ্রান্সকে। এবার অ্যালিয়েন্স এরিনা স্টেডিয়ামে ইউরো কাপ জয়ই হতে পারে এমবাপেদের পোয়েটিক জাস্টিস।
১৯৯৮ সালে দেশের বিশ্বকাপ জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দিদিয়েরঁ দেশঁ। ২০১২ সালে ফ্রান্স ফুটবল টিমের দায়িত্ব নেওয়ার পর নবজাগরণ শুরু হয় লে ব্লুজের। এক যুগ কেটেছে। তার মধ্যে দেশকে আরও একটি বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন। কিন্তু ২০১৬ ইউরো কাপ ও ২০২২ বিশ্বকাপ, দুই টুর্নামেন্টে ফাইনালে উঠেও হারের যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। এবার জার্মানির ইউরো কাপের তাঁরই ফুটবল মস্তিষ্কেই ভরসা করে লড়াইয়ে নামবে ফ্রান্স। দেশঁ জানিয়েছেন, যখন দল জিতবে, কেউ কোনও কথা বলবে না। যদি হারে, তা হলেই প্রশ্ন উঠবে। সেটাই স্বাভাবিক। এই ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে জয় কঠিন। আর জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা আরও কঠিন। দেশের হয়ে বিশ্বকাপে ফুটবলার ও কোচ হিসেবে জয় পেয়েছেন। কিন্তু এই দুই ভূমিকায় বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির কারও নেই। জার্মানির মঞ্চে দিদিয়ের দেশেঁর কাছে এবার সেই সুযোগ থাকছে।
এবার ইউরো কাপের মঞ্চে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ও দলের অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপের কাঁধে অনেকটাই দায়িত্ব থাকবে। ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের পর ২০২০ ইউরো কাপে নক আউটেই ছিটকে যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে একা লড়েছেন। ফাইনাল মঞ্চে এমবাপের পা থেকেই এসেছে ৩টি গোল। টুর্নামেন্টে ৮টি গোল করে ভেঙেছেন পেলের রেকর্ডও। তবে শুধু এমবাপে নয়, জার্মানিতে ফরাসি আক্রমণ বিভাগকে মজবুত করতে থাকবেন অ্যান্তেনিও গ্রিজম্যান ও ডেম্বেলে। বিশ্বকাপে নজর কাড়া অলিভিয়ার গিরুডও নজর কাড়বেন ইউরো কাপে। তবে ইউরো কাপের মঞ্চে কোন স্ট্র্যাটেজিতে রক্ষণ ও মিডফিল্ড সুরক্ষিত করবেন হেড কোচ দেশঁ, তারই অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা। কান্তে, সালিবা, উমামেকানো, অরিলিয়া সুয়ামেনিদের কাঁধেও তাই বাড়তি দায়িত্ব থাকবে।
এবার ইউরো কাপের গ্রুপে ফ্রান্সের সঙ্গে রয়েছে নেদারল্য়ান্ডস। প্রথম ম্যাচে তাঁদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়া। ২১ জুন নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে হাইভোল্টেজ ম্যাচ। আর তৃতীয় ম্যাচে ফ্রান্সের মুখোমুখি লেওয়ানদস্কির পোল্যান্ড।