অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে হার। স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠেছে, বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা জাতীয় দলে আর কতদিন! সত্যিই কি ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সময় এসেছে বিরাট ও রোহিতের? নাকি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে তাঁদের টানা খেলে যাওয়া উচিত!
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে সিরিজের হারের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্রথম টেস্ট বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্যাট কামিন্সদের কোনও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। গত ১১ জানুয়ারি ওই সিরিজের হার নিয়ে বৈঠক করে বিসিসিআই। বৈঠকে ছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও হেড কোচ গৌতম গম্ভীর। প্রেসিডেন্ট রজার বিনি ও জয়েন্ট সেক্রেটারি দেবাজিত সাইকিয়া, সহ সভাপতি রাজীব শুক্লাও বৈঠকে ছিলেন। দেড় ঘণ্টার বৈঠকে ঘরের মাঠ ও বিদেশের মাঠে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়েই আলোচনা হয়। ঠিক কী কারণে ভেঙে পড়ছে এমন তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপ? টিমের অন্দরে কি কোনও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে! যা জানে না টিম ম্যানেজমেন্ট। বোর্ডের বৈঠকে নির্বাচকদের সঙ্গেও কথা হয় বোর্ডের। কোনও সিরিজের আগে প্লেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে নির্বাচকদের। তবে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাকেও দলের জন্য আরও অ্যাকটিভ থাকতে হবে। এমনই জানিয়েছে বোর্ড।
ঘরের মাঠে খেলতে আসছে ইংল্যান্ড। তারপরই শুরু হয়ে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। অস্ট্রেলিয়া সফরে হারের পরেও দলের অধিনায়ক কে হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এত কিছুর পরেও অধিনায়ক থাকছেন রোহিত শর্মাই। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ফের একবার বোর্ড রোহিতের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। রোহিত নিজেও নাকি নিজের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। বোর্ডকে নিজেই নতুন অধিনায়ক খোঁজার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটকে কি বিদায় জানানোর সময় এসেছে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার! অস্ট্রেলিয়া সফরে পাঁচ ইনিংসে মাত্র ৩১ রান করেছেন রোহিত শর্মা। প্রথম ও শেষ টেস্টে খেলেননি রোহিত। ওদিকে পারথের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন বিরাট কোহলি। তারপর সিরিজে বড় রান আসেনি তাঁর ব্যাটে। ৯ ইনিংসে তাঁর মোট রান মাত্র ১৯০। আউটসাইড অফস্ট্যাম্পের দুর্বলতার জায়গাকে কাজে লাগিয়ে বারবার একইরকম ভাবে আউট হয়ে ফিরেছেন। নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে বোধ হয় এবার সরেই দাঁড়ানো উচিত ভারতীয় ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তীর। গত বছর T20 বিশ্বকাপ জয়ের পরই ওই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন বিরাট ও রোহিত।
অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম টেস্টে ছিলেন না রোহিত। দলকে নেতৃত্ব দেন জসপ্রীত বুমরা। তখনই প্রশ্ন ওঠে, রোহিতের বদলে এবার বুমরাকেই সিরিজের বাকি ম্যাচগুলিতে নেতৃত্ব দিতে দেওয়া হোক। কিন্তু কোনও বিশেষ কারণ ছাড়া নেতৃত্ব বদলের ঝুঁকি নেয়নি টিম ম্যানেজম্যান্ট। যার ফল হয় মারাত্মক। রোহিতের নেতৃত্ব কি খুবই ক্যাজুয়াল! সেই আগ্রাসী মেজাজ নেই! রাহুল দ্রাবিড়ের সময় খোলা মনে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু নতুন কোচ গম্ভীরের আমলে সেভাবে কাজ করতে পারছেন না তিনি?
২০২৪ সালেই রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ছটি টেস্ট হেরেছে ভারত। BGT সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪টি টেস্টে হারের নজির তৈরি হয়েছে। এই সফর শুরুর আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অন্তত 'সিরিয়াস' ব্যাটিং করবে ভারত। কিন্তু তা হয়নি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খারাপ ভাবে হেরে দেশে ফিরেছেন বিরাটরা। এখনও পর্যন্ত রোহিতের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া ১২টি টেস্টে জিতেছে। ৯টি টেস্টে হারতেওও হয়েছে ও ৩টি টেস্ট ড্র হয়েছে। বিরাট ও রোহিত যে কেরিয়ারের অন্তিম লগ্নে আছেন, তা নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে বোর্ডও। ইংল্যান্ড সিরিজে দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন করুণ নায়ার। বিরাট-রোহিত না থাকলে, দল কেমন হবে তারও একটি রূপরেখা তৈরি করে রাখতে চাইছে বোর্ড।
চলতি বছর টিম ইন্ডিয়ার ফোকাস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০১৩ সালে শেষবার মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ইন্ডিয়া। ২০২৪ সালে ১১ বছর পর T20 বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস তৈরি হয়েছে। এবার এই টুর্নামেন্টে জয়ের খোঁজে নামবেন রোহিত-বিরাটরা। ওয়ানডে ক্রিকেটে কিন্তু গত সিরিজে রোহিতের পারফরম্যান্স ভাল। শ্রীলঙ্কা সফরে রোহিত মোট ১৫৭ রান করেন। যার মধ্যে দুটি হাফসেঞ্চুরিও আছে। কিন্তু পারফর্ম করতে পারেননি বিরাট কোহলি। শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্পিন আক্রমণকে সামলাতেও ব্যর্থ হন তিনি। ইংল্যান্ড সিরিজ বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যদি কামব্যাকও করেন বিরাট, তবুও কি দলে থাকা উচিত তাঁর! নাকি নতুন প্রতিভাদের সুযোগ দেওয়া উচিত?