ভাল খাদ্য শরীরের ফুয়েলের কাজ করে। আর অস্বাস্থ্যকর খাবার ডেকে আনে চরম বিপদ। সবাই জানেন, স্বাস্থ্য সবথেকে বড় সম্পদ। কিন্তু আমরা কতটা তা মেনে চলতে পারি!
এই ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিতে ফিট থাকা সবারই জরুরি। ১ দিনে কত ক্যালোরি বার্ন করবেন! ফিট থাকার জন্য় কী কী করবেন! বিএমআর ফর্মুলা কী! ঘরে বাইরে ফিটনেস নিয়ে আলোচনা অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন গবেষণাতেও দেখা গিয়েছে নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি ফিটনেস নিয়ে সচেতন। তবে যদি অ্য়াথলিট হন, তা হলে দায়িত্ব আরও বেশি। ফিটনেস মানে কি নিয়ম মাপা জীবন! নাকি মন চাইলে সব কিছু খাওয়া যায়! এসব প্রশ্নের উত্তররা তো ফিটনেস এক্সপার্টরা দেবেন! কিন্তু ফিট কাদের বলে! কিন্তু ফিটনেস কি শুধুই পেশী! সমাজে দীর্ঘদিন ধরে একটা ধারণা গড়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া আসার অনেক আগেই এমনই এক ধারণা মন কল্পনা করে নিয়েছে। কেউ ফিট মানেই তাঁর সিক্স প্যাক থাকবে। দেহের সুচারু গঠন, কাঁধ থাকবে চওড়া। পুশ আপ, পুল আপ, এসব কোনও ব্যাপারই নয়। কিন্তু এই ধারণা সামগ্রিক অর্থে ঠিক নয়। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ সরফরাজ খান।
চিন্নাস্বামীতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে বেশ কিছু নজির গড়েছেন সরফরাজ খান। কিন্তু তাঁর ফিটনেস নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রাজকোট টেস্টে অভিষেক টেস্টে ৬০ বলে ৫৬ রান করেছিলেন। সেই সময় সরফরাজ খানের চেহারা, স্বাস্থ্য, ফিটনেস নিয়ে অনেক মন্তব্য হয়। ইংল্যান্ড সিরিজের পাঁচ মাস কেটে গেলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাক পাননি। বাংলাদেশ টেস্টেও প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। নিউজিল্যান্ড টেস্টে সুযোগ পেলেন। প্রথম টেস্টেই তাঁর ব্যাট থেকে এল ১৫০ রানের ইনিংস। ভারত হারলেও সরফরাজের ইনিংসের প্রশংসায় সতীর্থ থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। অভিষেক টেস্টের পর যে সমালোচনা শুনতে হয়েছিল, তা যেন গায়েব।
সরফরাজকে নিয়ে কে কী বলছেন!
সূর্যকুমার যাদব
সরফরাজ ফিটনেস নিয়ে কাজ করছে। ওর খাবারের জন্য আলাদা রাঁধুনি ছিল। অস্ট্রেলিয়ায় বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি খেলতে যেতে চায় ও। ওর শরীরও ভাল শেপে এসেছে। ফিটনেস খেলার জগতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দারুণ পরিশ্রম করছে। ভবিষ্যতে এর ফল পাবে।
সুনীল গাভাসকর
এটা প্রমাণ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। খেলায় ফিটনেসের কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয় না। বেঙ্গালুরু টেস্টে দুই ক্রিকেটার ভাল খেলেছেন, যাদের কোমর অনেকটাই চওড়া। এদের অতি বড় ভক্ত বলতে পারবে না, যে এরা খুব ছিপছিপে গঠনের। ঋষভ পন্থ ও সরফরাজ খানের পারফরম্যান্সই কিন্তু ইনিংস হারের থেকে ভারতে বাঁচাল।
মহম্মদ কাইফ
আমি সব সময়ই বলেছিলাম, ফিটনেসের জন্য সরফরাজকে বাদ দেওয়া যায় না। জিম করা শরীর ওর নয়। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাট করতে পারে ও। ক্রিকেট সব ধরনের ফিটনেসেই খেলা সম্ভব। জীবনে ফিটনেস নিয়ে অনেক কিছু শৈশব থেকে শুনতে হয়েছে ওকে। কিন্তু প্রতিবার ও ফিরে এসেছে।
গত অগাস্ট মাসে একটি সাক্ষাৎকারে নিজের ফিটনেস নিয়ে কথা বলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি সাক্ষাৎকারে সরফরাজ জানিয়েছেন, "আমি রোজ সকাল ৪টে ১৫ থেকে ৪টে ৩০-এ ওঠা অভ্যাস করেছি। লম্বা দূরত্ব হাঁটা শুরু করেছিলাম। ফিটনেস ঠিক করার জন্য় যা দরকার ছিল। এক মাস পর আধঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার হাঁটা সহজ হয়ে যায়। দৌড়ের পর জিম শুরু করি। দিনের একটা অংশে ফিটনেস আর ফিল্ডিং নিয়ে পরিশ্রম করি। আর সন্ধ্যার পরে ব্যাটিং অনুশীলন করি।" তবে এত পরিশ্রম করার পরেও কোনও প্রত্যাশা রাখেননি জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার। নিউজিল্যান্ড টেস্টে প্রথম টেস্টে সুযোগ পেয়েই ১৫০ রানের ইনিংস। এবার সরফরাজের লক্ষ্য নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাকি ২ টেস্টে নিজেকে প্রমাণ করতে চান সরফরাজ। আসল লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়া সফরে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি।