ওয়ানডে বিশ্বকাপ ছিল ট্রেলার। T20 বিশ্বকাপে সোজা সেমিফাইনালের টিকিট। ইতিহাস তৈরি করেছে আফগানিস্তান। দেশের ক্রিকেটের উত্থানের পিছনে অনেক 'কাহিনি'। কীভাবে নিজেদের ক্রিকেটকে বদলে ফেলল একটা দেশ। উপমহাদেশের বিগ থ্রির মধ্যে কেন বারবার উঠে আসছেন রশিদ খানরা! শ্রীলঙ্কার অবনমন ও বাংলাদেশের ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর, ভারত-পাকিস্তানের পর এখন উপমহাদেশের ক্রিকেটে একটাই নাম, আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানের ক্রিকেটের উত্থান রূপকথার সোনালি অধ্যায়ের থেকে কোনও অংশে কম নয়। প্রশ্ন অনেক। উত্তরও অনেকটা জানা। তবে জানা নেই, রশিদ খান, মহম্মদ নবীদের পূর্বসূরিদের অনেক লড়াই। ফিরে যাওয়া যাক, ২৫ বছর আগের এক সময়কালে। তখন আফগানিস্তানে যুদ্ধের দামামা। নারী-পুরুষ, বুড়ো-যুবক সবাই পাকিস্তান শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। সেই দুঃস্বপ্নের সময়কাল পেরিয়েছে শুধু ক্রিকেট খেলেই। ২০০৩ সালে পেশোয়ারে গ্যালারিতে বসে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখেছিলেন নওরাজ খান মঙ্গল। স্বপ্ন ছিল একদিন দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবেন। আফগানিস্তানের নামে গর্জন করবে গ্যালারি। দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে অনেকটা সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৯ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন ম্যাচে তাঁর হাত ধরেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়েছিল আফগানিস্তান। আফগান ক্রিকেটের পথ শুরু তখন থেকেই।
১৫ অগাস্ট, ২০২১। আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে তালিবান সরকার। সেই সময় আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, ১৩ বছরে যেটুকু পথ এগিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট, তার কি শেষের শুরু হয়ে গেল! কিন্তু যে দেশের ক্রিকেট শুরু হয়েছিল শরনার্থী শিবির থেকে, তারা কি এত সহজে শেষ হয়ে যাবে! না, হয়নি। ২০২২ সাল। বিশ্বকাপের ঠিক এক বছর আগে দলের দায়িত্ব নেন ইংল্য়ান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার জোনাথন ট্রট। সঙ্গে মেন্টর হয়ে আসেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার অজয় জাদেজা।
আফগান ক্রিকেটের উন্নতির পথ ছিল অনুর্বর, রুক্ষ। কাঁটা সরিয়ে ধীরে ধীরে পথ তৈরি করলেন এই জুটি। ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালীন অজয় জাদেজার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যেখানে জাদেজাকে হিন্দিতে বলতে শোনা যায়, আর আফগানিস্তানকে ছোটখাটো টিম বলা যাবে না। সেই মন্তব্য ভাইরালও হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারতে হয় আফগান ব্রিগেডতে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো বড় টিমকে হারিয়ে ইতিহাস তৈরি করেন রশিদ খানরা। আর ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে হেরে বিদায় নেয় আফগানিস্তান। এবার T20 বিশ্বকাপে আট মাস আগের সেই হারের বদলা নিল আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চমকের শুরু। অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পরই তৈরি হয়েছিল নতুন মাইলস্টোন। মঙ্গলবার বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলেন রহমাতুল্লাহ গুরবাজরা। এই T20 বিশ্বকাপ স্বপ্নের মতো। স্বপ্নপূরণ এখনও শেষ হয়নি। জিতে প্রত্যয়ী ক্রিকেটাররা। সেমিফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃহস্পতিবার আরও একবার ইতিহাস লিখতে নিজেদের উজাড় করে দিতে চাইছে আফগান ব্রিগেড।