আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তবে, নৃশংস ঘটনার পিছনে আরও কোনও প্রভাবশালী-র হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা । ধৃত সঞ্জয় রায়কে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে । সঞ্জয়ের দাবি, সে খুন করেনি । তাকে ফাঁসানো হচ্ছে । এমনকী, পলিগ্রাফ টেস্টেও বারবার এমনটাই দাবি করেছে সঞ্জয় । এদিকে, সিসিটিভি ফুটেজে ৯ অগস্ট ভোরে হাসপাতালে দেখা গিয়েছিল সঞ্জয়কে । জানা গিয়েছে তদন্তে নেমে হাসপাতালের নার্স থেকে নির্যাতিতার বন্ধু... প্রায় ১০০ জনের বয়ান নিয়েছে সিবিআই । সঞ্জয়ই মূল অভিযুক্ত নাকি, ঘটনার পিছনে অন্য কোনও মাথা আছে, এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও এ প্রশ্নের উত্তর অধরা । এদিকে আরও একটা প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে । ওই নির্যাতিতা কি হাসপাতাল সংক্রান্ত এমন কিছু জেনে গিয়েছিলেন, যার খেসারত দিতে হল তাঁকে ?
নির্যাতিতার বাবা-মা-ও বারবার দাবি করেছেন, তাঁদের মেয়ে হাসপাতালের ভিতরের গোপন কোনও তথ্য জেনে গিয়েছিল । হাসপাতালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তারই বলি হয়েছেন নির্যাতিতা । এদিকে, হাসপাতাল সূত্রে একটি বড় তথ্য উঠে আসছে । জানা গিয়েছে, ঘটনার কয়েকদিন আগে নির্যাতিতা হাসপাতালের কয়েকজন শিক্ষককে জানিয়েছিলেন, হাসপাতাল সম্পর্কে তাঁর কাছে এমন কিছু তথ্য রয়েছে, যা তিনি উচ্চপর্যায়ে পাঠাতে চান । সরাসরি সরকারের শীর্ষ স্তরে পাঠাতে চেয়েছিলেন, তার জন্য কয়েকটি ইমেইল আইডিও জোগাড় করেছিলেন । সব 'জেনে যাওয়ার' জন্যই তাঁর এই নির্মম পরিণতি হল ? তাঁর মৃত্যুর পিছনে যে বড় একটা রহস্য রয়েছে এবং বড় একটা চক্র কাজ করছে, সেরকমটাই আশঙ্কা করছেন নির্যাতিতার মা-বাবা থেকে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনরা । সম্প্রতি, নির্যাতিতার একটি ডায়েরি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁর বাবা । তবে, ওই ডায়ের কয়েকটা পাতাও ছেঁড়া ছিল । তাহলে, কি ওই ডায়ের পাতাতেই লেখা ছিল কী তথ্য হাতে পেয়েছিলেন তিনি ? উত্তর এখনও অধরা ।
আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । হাসপাতালের বেড, সরঞ্জাম থেকে ওষুধ...সবেতেই দুর্নীতির অভিযোগ । এই তিনটি ক্ষেত্রেই সব মিলিয়ে মাসে অন্তত ৭-৮ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে । অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বা স্যালাইন ব্যবহার করা হত । তদন্তকারীদের দাবি, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে ওষুধের কার্যকারিতা কমতে থাকে। কিন্তু কয়েক মাস পর্যন্ত তা ব্যবহার করা যায়। সেই ওষুধই চিকিৎসার কাজে লাগানো হত । তৈরি করা হত নতুন ওষুধ কেনার ভুয়ো রসিদ । হাসপাতালের বেডের ক্ষেত্রেও তাই ।
মাসে মাসে ১৫-২০টি বিভিন্ন ধরনের বেড কেনার যে রসিদ সিবিআই পেয়েছে, সেটা ভুয়ো বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দারা । সিবিআই আধিকারিকদের দাবি, বেড বিকল বা নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো বাতিল করে নতুন কোনও শয্যা কেনাই হত না । উল্টে সেই বিকল খাটগুলি সারিয়ে, পুনরায় সেগুলিই ব্যবহার করা হত । কিন্তু, রসিদে দেখানো হত, নতুন খাট কেনা হয়েছে । সেই টাকাটা যেত হাসপাতালেরই কয়েকজনের পকেটে ।
হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ এবং বদলি নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, মেডিক্যাল কাউন্সিলে রমরমা ছিল অভীক, বিরূপাক্ষদের । অভিযোগ, দিনের পর দিন জুনিয়র ডাক্তারদের ভয় দেখানো হয়েছে, তাঁদের কথা না মানলে রেজিস্ট্রেশন আটকে দেওয়া হবে । যাঁকে বলা হচ্ছে 'থ্রেট কালচার'। সন্দীপের অঙুলি হেলনেই সবটা চলত বলে অভিযোগ ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, পড়ুয়াদের অনেকেই আছেন, যাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও প্রাথমিক জ্ঞানই । কারণ নিয়োগে অস্বচ্ছতা । এমন পড়ুয়াও আছেন, যাঁরা ডাক্তারি তো পাশ করেছেন, কিন্তু, চিকিৎসার ন্যূনতম জ্ঞানটুকু তাঁদের নেই । যার ফল কিন্তু মারাত্মক । প্রশ্ন উঠছে, কেন এভাবে রোগীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে ? কিন্তু, উত্তর দেবে কে ? প্রবীণ চিকিৎসকরা বলছেন, গোটা সিস্টেমটাতেই ঘুণ ধরে গিয়েছে । আমূল সংস্কার প্রয়োজন ।