দুর্গাপুজো শেষ । আজ, মঙ্গলবার ত্রয়োদশী তিথি । ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে । কিন্তু, বীরভূমের কঙ্কালীতলার ছবিটা একটু আলাদা । আজ সেখানে চলছে কুমারী পুজো । সাধারণত দুর্গাপুজোর সময় অষ্টমী তিথিতেই কুমারী পুজো হয় । কোথাও সপ্তমী ও নবমীতেও কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয় । কিন্তু,প্রত্যেক বছরই পুজো শেষে ত্রয়োদশী তিথিতে কঙ্কালীতলায় কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয় । এবছরও তার অন্যথা হয়নি । কঙ্কালীতলার কুমারী পুজোর আরও একটা বিশেষত্ব হল ৫১ জনকে কুমারী হিসেবে পুজো করা হয় এখানে । এবছরও কুমারী পুজো উপলক্ষে ভক্তদের ভিড় জমেছে সতীপীঠ কঙ্কালীতলায় ।
কঙ্কালীতলার কুমারী পুজোর মাহাত্ম্য কী ?
কঙ্কালীতলার কুমারী পুজোর নেপথ্যে নানারকম গল্পকথা, বিশ্বাস রয়েছে । কঙ্কালীতলা হল সতীপীঠ । মহাদেব যখন সতীর মৃতদেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন, সেইসময় সতীর দেহের ৫১টি খণ্ডের যে একটি খণ্ড পড়ে কঙ্কালীতলায়। তারপর থেকেই ৫১ সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম হল কঙ্কালীতলা । কুমারী পুজো কী ইতিহাস বা মাহাত্ম্য রয়েছে ?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের কাপাসটিকুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় ৪৪ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে কুমারী পুজোর সিদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকে চলে আসছে এই পুজো। দুর্গাপুজোর আগের থেকে এখানে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় । কঙ্কালীতলার বিভিন্ন গ্রামের ৫-৯ বছরের কুমারীদের পরিবারের সদস্যরা পুজোর জন্য নাম লিখিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে ৫১ জনকে নির্বাচিত করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেখা গেল কঙ্কালীতলায় ভক্তদের ভিড় । দেবীরূপে সেজে উঠেছেন ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী কুমারী মেয়েরা। সতীর দেহের ৫১টি খণ্ডকে মন্ত্রের দ্বারা একত্রিত করে সংকল্পের মাধ্যমে ঘটে স্থাপন করা হয় এবং সতীর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হয়। তারপর কঙ্কালীতলায় কালীমন্দির সংলগ্ন পঞ্চবটী গাছের নিচে ৫১ জন কুমারীর পুজো হয় । চার ঘণ্টা ধরে পুজো চলে ।
জানা গিয়েছে গত ৪৫-৪৬ বছর ধরে ত্রয়োদশী তিথিতে পুজো চলে আসছে কঙ্কালীতলায় । কুমারী পুজোকে কেন্দ্র করে কঙ্কালীতলায় মেলা বসে । রাজ্য, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয় কঙ্কালীতলায় । এদিনও, সেই ছবি দেখা গেল বীরভূমের কঙ্কালীতলায় ।