উৎসবের মরশুম শেষ হয়েও যেন শেষ হচ্ছে না । দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটা মিটেছে । এবার জগদ্ধাত্রী পুজো । চলতি বছরের জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে ইতিমধ্যেই সাজো সাজো রব হুগলির চন্দননগরে ও নদিয়ার কৃষ্ণনগরে । দুই জেলায় মহাসমারোহে চলছে প্রস্তুতি । দেবী হৈমন্তিকার আবাহনে সেজে উঠেছে চন্দননগর ও কৃষ্ণনগর ।
হুগলির ভদ্রেশ্বর সেজে উঠেছে জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য । কারণ এখানেই দেবী জগদ্ধাত্রী বুড়িমা নামে পরিচিত । ২৩২ বছরের পুরনো এই পুজোর আয়োজন করা হয় ভদ্রেশ্বরের তেঁতুল তলায়। এই বারোয়ারি পুজো দেখতে প্রতিবছরই লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় করেন মন্দির প্রাঙ্গণে । প্রথা অনুযায়ী, পঞ্চমীর দিন দেবীকে শাড়ি পরানো হয়। নিয়ম মতো ইতিমধ্যেই বুড়িমাকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। প্রায় ২২৫টি বেনারসি শাড়ি পরানো হয় বুড়িমা-কে।
কীভাবে এই পুজোর প্রচলন?
শোনা যায়, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুর গৌরহাটিতে বাস করতেন । তিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুমতি নিয়ে দুই বিধবা কন্যাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন । পরবর্তীতে তা বারোয়ারি পুজোতে পরিণত হয় । এভাবেই শুরু হয় তেঁতুলতলা বারোয়ারি পুজো ।
প্রত্যেক বছর প্রায় বেনারসি, ছাপা শাড়ি ও অন্যান্য শাড়ি মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি শাড়ি থাকে । পুজোর পরে প্রতিবছরই দেবীর পরনের শাড়ি এবং দানের শাড়ি আবার দান করে দেওয়া হয় । ওই বেনারসিগুলি মূলত কোনও গরিব মেয়েদের বিয়েতে দিয়ে দেওয়া হয় । দশমীর দিনে দেবীকে বরণেও বিশেষত্ব রয়েছে । তেঁতুলতলা বারোয়ারি পুজোয় দেবীকে বরণ করেন পুরুষরা । তাঁরা শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বরণ করতে আসেন দেবীকে ।
জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোয় মুড়ে ফেলা হয় চন্দননগর। চলতি বছর রকমারি আলোর পাশাপাশি প্রাধান্য পাচ্ছে প্রতিমার অঙ্গসজ্জ্বা। সোলার সাজে থিমের ছোঁয়া এসেছে দেবী জগদ্ধাত্রীর রূপে । বিদেশিদের মধ্যেও চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর জনপ্রিয়তা রয়েছে । বর্ধমানের বনকাপাসি থেকে আসা শয়ে শয়ে সোলা শিল্পীর হাতে সাজছেনদেবী ।
হুগলির ভদ্রেশ্বর, মানকুণ্ডু, চন্দননগর মিলিয়ে প্রায় আড়াইশোটি জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়জন করা হয় । তার মধ্যে ১৭৭ টি পুজো চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির অধীনে । সব পুজোতেই সোলার সাজ ও অলঙ্কার পরানো হয় দেবীকে । তবে বর্তমানে সোলার সাজেও এসেছে অভিনবত্বের ছোঁয়া ।
জানা গিয়েছে,২০২১ সালে করোনার জন্য দেবীর বিসর্জনে শোভাযাত্রা হয়নি। ওই বছর থেকেই দেবীর অঙ্গসজ্জায় খরচ বাড়ানো হয়। এরপর দেখা যায় এই শিল্পকলার প্রতি বহু মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছেন। এরপর শোভাযাত্রা শুরু হলেও সোলার সাজে বৈচিত্র্য বজায় থাকে ।