Alipore Zoo: ওয়াজেদ আলি শাহ আসতেন নিয়মিত, আসতেন বিবেকানন্দ...১৫০ বছরে ফিরে দেখা আলিপুর চিড়িয়াখানার ইতিহাস

Updated : Dec 17, 2024 12:17
|
Editorji News Desk

Alipore Zoo History: 

শীতকাল আর কলকাতা, শব্দ দুটো পাশাপাশি উচ্চারণ করলেই যে কটা আইকনিক জায়গার কথা চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায়, তার একেবারে প্রথমে থাকবে চিড়িয়াখানা। দেখতে দেখতে দেড়শ বছর পেরলো আলিপুর চিড়িয়াখানার। ১৮৭৬-এর পয়লা জানুয়ারি প্রিন্স অব ওয়েলস (পরে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড) কলকাতা ভ্রমণের সময় উদ্বোধন করেছিলেন এই জ়ুলজিক্যাল গার্ডেনের। এই প্রিন্স ওফ ওয়েলসকে আমরা চিনি সপ্তম এডওয়র্ড নামে। (পিটিসি ১)

চিড়িয়াখানা মানে শুধুই কি বিনোদন? কক্ষনও না। শহরের যে জায়গার সঙ্গে দেড়শ বছরের ইতিহাস জুড়ে আছে, সে তো নিজেই গল্পের খনি। আলিপুর পশুশালাও ঠিক তাই। (ভিও-১)। 

উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগেই কলকাতায় চিড়িয়াখানা স্থাপনের চিন্তা শুরু করে ব্রিটিশ প্রশাসন। ১৮৭৫ সালে, বাংলার বড়লাট স্যর রিচার্ড টেম্পল জিরাট ব্রিজের দু’পাশের বস্তি সরিয়ে জায়গা করে দেওয়া হয় চিড়িয়াখানার জন্য। চিড়িয়াখানার প্রাথমিক খরচ তুলতে দেড়শ বছর আগে, দুই লক্ষ টাকারও বেশি চাঁদা তোলা হয়। প্রথম দিকে চিড়িয়াখানা পরিচালন কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন জার্মান প্রযুক্তিবিদ কার্ল লুইস শোয়েন্ডলার ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী জর্জ কিং। (পিটিসি ২)

উনিশ শতকের প্রায় শুরু থেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহরে বিরল পশুপাখির একাধিক সংগ্রহ গড়ে উঠেছিল। শোয়েন্ডলারের সংগ্রহ ছাড়া উল্লেখযোগ্য আরও দুজনের সংগ্রহের কথা একটু পরেই বলব। একটু অপেক্ষা করুন। শীতের শহরে কুয়াশার চাদর যেমন একটু একটু করে গা থেকে সরে, আমাদের গল্পও তেমন। (ভিও ২)

রামব্রহ্ম সান্যাল, এই নামটা ছাড়া চিড়িয়াখানার ইতিহাস অসম্পুর্ণ। তিনি ছিলেন আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় সুপারিন্টেনডেন্ট। জর্জ কিং তাঁর প্রাক্তন ছাত্র রামব্রহ্মকে চিড়িয়াখানায় কাজে নিযুক্ত করলেন। ১৮৭৬-এর ২৪ জানুয়ারি। ১৮৭৭ সাল থেকে রামব্রহ্ম হেডবাবু হিসেবে কাজের দায়িত্ব পান। তিনি আলিপুর পশুশালার নামকরণ করেছিলেন ‘আলিপুর জীবনিবাস’। পশুপাখিদের বিজ্ঞানসম্মত নামের উল্লেখ থাকা দরকার, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। জীবজন্তুদের স্বাস্থ্য, অসুখবিসুখ, খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও খোঁজ রাখতেন। প্রতিদিন সকাল-বিকেল কর্মচারীদের নিয়ে পশুশালা ঘুরে দেখতেন। তাদের নিজের হাতে খাওয়াতে ভালবাসতেন। সাধ্য মতো অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসা করতেন, প্রয়োজনে পশুচিকিৎসককে দেখিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। পিটিসি ৩)

অনেক সময় ছোটখাটো অপারেশন করতে হত চিড়িয়াখানার পশু পাখির, সে ক্ষেত্রে তাঁর ডাক্তারি বিদ্যা কাজে লাগত। কোনও পশুর মৃত্যু হলে তার পোস্টমর্টেমে পশুচিকিৎসককে সাহায্য করতেন, কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠাতেন রামব্রহ্ম সান্যাল। ১৮৮০-র ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে দর্শকদের টানতে চিড়িয়াখানার ভিতরে ইলেকট্রিক ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রামব্রহ্ম ট্রেন চালানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বার্ন কোম্পানিকে। পশুশালায় এই ছোট ট্রেন দেখতে খুব ভিড় হয়েছিল। বাংলার ছোটলাট স্যর অ্যাশলে ইডেন স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন সে দিন। চিড়িয়াখানায় টিকিট বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল হু-হু করে। ১৮৮৩-৮৪ সালের এক হিসাব বলছে, সারা বছরে ১,৮৮,৫৯৩ জন এসেছিলেন চিড়িয়াখানায়। 

১৮৯৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা ও স্বামী যোগানন্দ চিড়িয়াখানা দেখতে আসেন। চিড়িয়াখানার মনোরম পরিবেশ নাকি বিবেকানন্দকে বেশ টেনেছিল। রাম্ব্রহ্মের সঙ্গে কত ভাবনার আদান প্রদানও হয়েছিল বিবেকানন্দের। সে বছরেই ভারত সরকার রামব্রহ্মকে ‘রায়বাহাদুর’ খেতাব দেয়। (ভিও-৩)


দেশীয় ধনীদের অনেকে বিরল পশুপাখি ‘সংগ্রহ’ করতেন। তার মধ্যে মার্বেল প্যালেসের রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক চিড়িয়াখানার পশুদের প্রথম আবাসগৃহ ‘মল্লিক হাউস’ তৈরিতে দান করেন।  একটি ছিল বড়লাট ওয়েলেসলির ব্যারাকপুরের বাগানবাড়িতে। আলিপুরের চিড়িয়াখানা শুরুর সময় সেখানে থেকে স্থানান্তরিত করা হয় কিছু পশু। তার মধ্যে ছিল লর্ড ক্লাইভের পোষ্য বলে খ্যাত, অদ্বৈত নামের কচ্ছপটিও। রাজা ওয়াজিদ আলি শাহ মেটিয়াবুরুজে জীবজন্তুর বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণেও আগ্রহী ছিলেন। জীবজন্তুদের প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো উন্মুক্ত ‘এনক্লোজার’-এ রাখার ব্যবস্থাও সম্ভবত তিনিই প্রথম করেন। 

নবাব মাঝেমধ্যে চিড়িয়াখানায় আসতেন এবং তাঁর জাপানি কায়দার রিকশায় পশুশালা ঘুরতেন। রামব্রহ্মর সঙ্গে পশুপ্রেমিক নবাবের কথাও হত। নবাব তাঁর ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা থেকে একটি ভারতীয় বাঘ, এক জোড়া মালয় দেশের বাঘ ও এক জোড়া চিতাবাঘ, দুটো বাঘিনি উপহার হিসেবে পশুশালায় পাঠিয়েছিলেন। (লাস্ট পিটিসি)

তাহলে কী দাঁড়াল? কিছুটা ব্রিটিশ ভারতের গন্ধ, কিছুটা নবাবি, কিছুটা জমিদারি, সব নিয়ে চিড়িয়াখানার ইতিহাস কিন্তু দারুণ রঙিন। কলকাতার সঙ্গে একটু একটু করে বয়স বাড়ছে চিড়িয়াখানার। বুড়ো হচ্ছে বটে, বাতিল কিন্তু হচ্ছে না। ওয়াইনের যেমন বয়স বাড়লে কদর বাড়ে। মহার্ঘ্য হয়ে ওঠে, এ কলকাতাটাও ঠিক তাই। বয়সের স্কোরবোর্ডে রান যত বাড়ছে, তত বেশি ইতিহাস এসে জুড়ে বসছে এ শহরটায়।  (লাস্ট ভিও)

 

alipore zoo

Recommended For You

editorji | লাইফস্টাইল

ঘটা করে আলাদা দিন, অথচ ছক ভাঙলেই প্রশ্নের মুখে মায়েরা! মাতৃদিবসের কড়া সত্যি এটাই

editorji | লাইফস্টাইল

Digha Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেই চৈতন্য দেবকে খুন করা হয়েছিল? জেনে নিন রোমহর্ষক কাহিনী

editorji | লাইফস্টাইল

Jagannath: জগন্নাথই কৃষ্ণ, আবার তিনি আদিবাসীদেরও দেবতা! রইল নানা অজানা তথ্য

editorji | লাইফস্টাইল

Darjeeling Day tour: এক দুপুরে দার্জিলিং...বৈশাখের দাপটে পাহাড়ের রানি যেন একটুকরো স্বর্গ

editorji | লাইফস্টাইল

Offbeat Tabakoshi: মিরিকের কাছেই চা বাগানে ঘেরা তাবাকোশি যেন এক টুকরো স্বর্গ