আরজি কর হাসপাতালে ওষুধের মান নিয়ে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়েছিলেন নির্যাতিতা। আনন্দবাজারের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, সহকর্মীরা বারবার তাঁকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু তিনি মুখ বন্ধ রাখেননি। দুই সতীর্থকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘরে গিয়ে ওষুধের মান ও কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই সময় সন্দীপ ঘোষ তাঁকে দানিয়েছেন, এত বেশি কথা বললে তাঁর আর পাশ করা হয়ে উঠবে না। ওই সময় হাসপাতালের আরও দুই কর্তা সেখানে ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েকমাস ধরে ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু, ওষুধের কার্যকারিকা না থাকায় রোগীর অবস্থা খারাপ, এসব নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল অধ্যক্ষের টেবিলে। কিন্তু তাতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই অভিযোগ।
এদিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজেও বিস্ফোরক অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রশাসনিক ভবনের বেশ কয়েকটি ঘর দখল করে চলত রাতভর পার্টি, মদ্যপান। তিন-চারটি ঘর পাকাপাকিভাবে কব্জায় ছিল সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ অভীক দে ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের। এমনই লিখিত অভিযোগ এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের চার সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছে। প্রশাসনিক ভবনের ওই ঘরগুলিতে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রীদের জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে ডেকে আনা হত। তাঁদের দিয়ে খাবার ও মদ পরিবেশ করানো হত বলেও অভিযোগ উঠেছে। নির্দেশ না মানলে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়া, রেজিস্ট্রেশন আটকানোরও হুমকি দেওয়া হত বলে অভিযোগ। তদন্ত কমিটির কাছে জমা পড়া অভিযোগে জানা গিয়েছে, মেডিকেল পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর জোর করে কাছে রাখতেন অভীক। সেই নম্বর রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কাছে যেত। এমন কী রাতে তাদের সঙ্গ দিতে সেই শিক্ষানবীশদের ডাক পড়ত বলেও অভিযোগ।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা দিয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সাতদিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এত বিপুল চিঠি ও তথ্য জমা পড়েছে, যে রিপোর্টের জন্য ১৪ দিন সময় চেয়ে নিয়েছে কমিটি। এই চিঠি ও তথ্যের বড় অংশ বড় অংশ বর্ধমান মেডিকেল কলেজের। কমিটির তদন্তে জানা গিয়েছে, নিয়মিত বর্ধমানের মর্গ থেকে মভিসেরা ও হাড় ৭-১৫ লক্ষ টাকার বিনিময় বিহার, উত্তরপ্রদেশের মেডিকেল কলেজে পাঠানো হত বলেও অভিযোগ অভীক দে ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ সূত্রে খবর, ২০২১-২২, ২০২২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল শিক্ষানবীশ ছাত্রীদের অশালীন মেসেজ পাঠানো হত বলে অভিযোগ। পরীক্ষার হলেও ছিল অবাধ গতিবিধি। পছন্দের ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রকাশ্যে বলে দেওয়া হত উত্তর। কারা অনার্স পাবে, সেটাও ঠিক করতেন অভীক দে ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা।