RG কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI। তদন্তে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য ইতিমধ্যে হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, শুধু যে ওষুধ বা টেন্টার বণ্টনে অনৈতিক কাজ হয়েছে এমনটা নয়, হাসপাতালের মর্গেও রীতিমতো তোলাবাজি চলত। প্যাকেজ সিস্টেমে চলত মৃতদেহের ময়না তদন্ত এবং পরবর্তী কাজকর্ম।
তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পেরেছেন, মৃতের পরিবারের আর্থিক ক্ষমতা বুঝে প্যাকেজ হাঁকত দুর্নীতির কারবারীরা। নূন্যতম ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্যাকেজ পৌঁছে যেত ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কীভাবে এই চক্র কাজ করত?
তদন্তে উঠে এসেছে, কোনও মৃতদেহ মর্গে পৌঁছনোর পর সেখানকার কর্মীরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেন। বুঝে নিতেন পরিবারের আর্থিক অবস্থা কেমন। তারপর প্যাকেজের দর নির্ধারণ করতেন।
প্যাকেজের মধ্যে কী কী থাকে?
ওই প্যাকেজের মধ্যেই থাকত, ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ সেলাই, স্নান করানো, দেহ পরিষ্কার, গোটা দেহ প্ল্যাস্টিক দিয়ে মোড়ানো। এছাড়াও শববাহী গাড়িরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হত ওই প্যাকেজের মধ্যেই।
প্যাকেজের টাকার পরিমাণ বাড়ালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শববাহী গাড়িরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হত। মূলত টাকা দিতে পারলেই নিশ্চিন্ত মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
টাকা দিতে না পারলে কী হত?
তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরেও প্যাকেজের টাকা দিতে অস্বীকার করায় মৃতের পরিবারের সদস্যদের উপর জুটত অবিচার। ময়নাতদন্তের পর রক্ত এবং শরীরের রস ভালো করে ধোয়া হত না। ভালোভাবে মৃতদেহ সেলাই করা হত না। এবং অস্বাভাবিক দেরিতে দেহ পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হত।
এই চক্রের মাথা কে?
আর জি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে এটাই এখন জানার চেষ্টা করছে CBI। হাসপাতালের মর্গে ওই প্যাকেজের মাথা কে? কার কাছে পৌঁছে যেত প্যাকেজের টাকা?
প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পুরো বিষয়টি চালাতেন RG কর হাসপাতালের মর্গে কর্মরত একজন ডোম। প্রথমের দিকে তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত থাকলেও গত বছর তিনি বদলি হয়ে আসেন RG কর হাসপাতালে। তিনি ধৃত সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ওই ব্যক্তিকে মর্গের পুরোপুরি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবং সেখানে আগে থেকেই কর্মরত দুই ডোমকে মৌখিক নির্দেশে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, যাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন বর্তমানে অ্য়ানটমি বিভাগের ডিসেকশন রুম এবং অন্যজন ইমার্জেন্সির শব সংরক্ষণ রুমে ডিউটি করেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, মৃতদেহের সঙ্গে সহবাসের ভিডিয়ো তুলে রমরমিয়ে চলত ব্যবসা। সূত্রের খবর, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের মোবাইল থেকে বেশ কয়েকটি পর্ন ভিডিয়ো উদ্ধার করা হয়েছে যেগুলি RG কর মেডিক্যাল কলেজের মর্গের ভিতর। যেখানে মরদেহের সঙ্গে সহবাস করার দৃশ্য রয়েছে।