দীর্ঘ পথ পেরিয়ে অবশেষে শিয়ালদহে ফিরল দুর্ঘটনার কবলে পড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। গভীর রাতে ওই ট্রেন থেকে নামা প্রতিটি যাত্রীর চোখে মুখে তখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। দীর্ঘ ধকল গ্রাস করেছে তাঁদের শরীরে। এই ট্রেন রাতে আসছে। তার আগে যাত্রীদের পরিষেবা দিতে তৈরি ছিল সরকারি বাস। তদারকির দায়িত্বে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি বাসে ওই ট্রেনের যাত্রীদের বাড়ির দিকে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়।
ফারাক ৩৮০ দিনের। সেই জুন মাসেই বিপর্যয় নামল ভারতীয় রেলে। সোমবার সকালে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল শিয়ালদহমুখী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। জলপাইগুড়ির রাঙাপানির কাছে একই লাইনে এসে এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। ঘটনায় রাত পর্যন্ত আট জনের মৃত্যুর কথা সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মালগাড়ির চালক ও সহ চালক। কার গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা ? দিনভর নানা বিশ্লেষণের পর ভারতীয় রেলের দাবি, ঘটনার পিছনে দায়ী মালগাড়ির মৃত চালক। কারণ, সিগন্যাল ফেল করেই এক্সপ্রেস ট্রেনের পিছনে ধাক্কা মারা হয়েছে। এই অবস্থায় মধ্যরাতে শিয়ালদহে ফিরছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। যাত্রীদের সুরক্ষিত ভাবে বাড়ি ফেরাতে তৎপর রাজ্য প্রশাসন।
যদিও রেলের একটি অংশ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে ওই লাইনের একটি বড় অংশে স্বয়ং সিগন্যাল খারাপ হয়ে গিয়েছিল। দুটি ট্রেনের চালক ও গার্ডের কাছে ছিল কাগুজে অনুমতি। রেলের পরিভাষায় যাকে বলে পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, এই অবস্থায় কী ভাবে মালগাড়ির চালককে দায়ী করা যায় ?
এই তরজার মধ্যেই ঘটনাস্থলে যান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রাঙাপানি গিয়ে তিনি জানান, পরিষেবা শুরু করাই প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আপ এবং ডাউন লাইনে পরিষেবার কাজ নতুন করে চালু হয়। এরমধ্যেই ঘটনার ঘণ্টা চারেক পর ক্ষতিগ্রস্থ বগিগুলিকে বার করে শিয়ালদহের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের নেতৃত্বে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিকেলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেরিয়ে তিনি জানান, সকাল নটার কিছু আগে তাঁর কাছে প্রথম দুর্ঘটনার খবর আসে। তাঁর নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক হামিদুল ইসলাম। শুরু হয় উদ্ধারের কাজ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আহতদের দ্রুত সুস্থ করতে দুরন্ত কাজ করেছেন তাঁর চিকিৎসকরা। আলাদা ভাবে প্রশংসা করেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের। যাঁরা রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন আহতদের।
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এদিন উত্তরবঙ্গে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিহত এবং আহতদের পরিবারকে অর্থ সাহায্যের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।