দশম দিনে পড়ল জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন। সোমবার অনশন মঞ্চে অসুস্থ আরও এক অনশনকারী ডঃ তনয়া পাঁজা। তনয়া কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট। অসুস্থতা বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছেন না তনয়া, অনশন চালিয়ে যেতেই চাইছেন।
বসে থাকলে তো বটেই, শুয়ে থাকলেও ঘন ঘন মাথা ঘুরছে তনয়ার। অনশনরত অন্য ডাক্তারদের তুলনায় একটু বেশি-ই অসুস্থ তনয়া। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ করা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তনয়ার রক্তচাপ ছিল ৯৮/৭০। তাঁর নাড়ির গতি ৭৮ এবং ক্যাপিলারি ব্লাড গ্লুকোজ় (সিবিজি) ৬৩। সিবিজি ৬০-এর নীচে নেমে গেলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে, জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আমরণ অনশনে বসা তনয়া আরজি কর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রথম থেকেই। শহরজুড়ে চলা চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের একাধিক মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন তনয়া। স্লোগান দিয়েছেন, গান গেয়েছেন জনসভায়।
রবিবার রাতে অনশন মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন ডঃ পুলস্ত্য আচার্য। এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে পুলস্ত্যকে। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনও বিপদ কাটেনি। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লেন ডঃ তনয়া পাঁজাও।
ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে প্রথম হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল ডঃ অনিকেত মাহাতোকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অনশনরত ডঃ আলোক কুমার ভর্মাও হাসপাতালে ভর্তি। শনিবার রাতে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন আরও এক অনশনরত ডাক্তার অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়।
দশ দফা দাবিতে গত ৫ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশন চলছে। ধর্মতলার অনশনমঞ্চে এখনও অনড় বাকি আন্দোলনকারীরা। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও মনোবল এখনও অটুট। গত শনিবার রাত থেকে আমরণ অনশনে বসেছিলেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। রবিবার অনশনে যোগ দেন অনিকেত। শুক্রবার অনশনে যোগ দিয়েছেন আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার পরিচয় পাণ্ডা বং আলোলিকা ঘড়ুই। উত্তরবঙ্গে অনশনে বসেছিলেন আলোক বর্মা এবং শৌভিক। সোমবার উত্তরবঙ্গে অনশনে বসলেন আরও এক জুনিয়র ডাক্তার সন্দীপ মণ্ডল।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে দেশজুড়ে প্রতীকী অনশনে নামছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, আগামী মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টা অনশন করবেন দেশের সব মেডিকেল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা। রবিবার আইএমএ- সদর কার্যালয় থেকে আঞ্চলিক শাখাগুলিতে এখবর জানানো হয়েছে। সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালেও অনশন হবে।
জুনিয়র ডাক্তারদের দশ দফা দাবিগুলি কী?
প্রথম দাবি- RG কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি- স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে অতি দ্রুত তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে হবে।
তৃতীয় দাবি- রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে।
চতুর্থ দাবি- সরকারি হাসপাতালে ফাঁকা বেডের তালিকা একটি মনিটারে দেখাতে হবে।
পঞ্চম দাবি- আন্দোলনকারীদের পঞ্চম দাবি অতি দ্রুত মেডিক্যাল কলেজগুলিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি- জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে দায়িত্ব দিতে হবে পুলিশকে।
সপ্তম দাবি- অতি দ্রুত প্রতিটি হাসপাতালে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে।
অষ্টম দাবি- থ্রেট কালচার পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে হবে। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে।
নবম দাবি- প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
দশম দাবি- পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে বেনিয়মের অভিযোগগুলির দ্রুত তদন্ত করতে হবে।