আরজি কর কাণ্ডের ক্ষত এখনও দগদগে। এখনও বিচার পায়নি নির্যাতিতার পরিবার। থ্রেট কালচার, রেপ কালচার নিয়ে আন্দোলন চলছে। কর্তব্যরত অবস্থায় এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল এই রাজ্য। লক্ষ্মীপুজোর সকালে চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এবার ঘটনাস্থল কৃষ্ণনগর। পুজোর ফাঁকা মন্ডপে এক যুবতীর বিবস্ত্র অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, ধর্ষণ হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন ওই যুবতীর প্রেমিক। তাকে আটকও করা হয়েছে।
কৃষ্ণনগরের রামকৃষ্ণপাড়ায় মহিলা পরিচালিত একটি পুজো হয়। প্রতিমা বিসর্জন আগেই হয়ে গিয়েছে। মন্ডপ ফাঁকাই ছিল। সেই ফাঁকা মন্ডপে যুবতীর বিবস্ত্র দেহ কীভাবে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান কোতোয়ালি থানার পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবতীর শরীরে কোনও পোশাক ছিল না। মুখে অ্য়াসিড বা অন্য কোনও রাসায়নিক দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, দেহ শনাক্ত করা যায়নি। প্যান্ডেলের একটি অংশও পুড়ে গিয়েছে তাই পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সম্ভবত, ওই প্যান্ডেলেই যুবতীর দেহ পোড়ানো হয়েছে। ধর্ষণ হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লক্ষ্মীপুজোর সকালে এমন ঘটনায় স্বভাবতই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। চাঞ্চল্য আরও বেড়েছে, ঘটনাস্থল থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে থানা। ১০০ মিটার দূরে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস।
এরকম একটি জনবহুল এলাকায় ওই যুবতীর দেহ কীভাবে এল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ওই যুবতী এলাকার মেয়ে নন। মৃত যুবতীর পরিচয় জানার জন্য বিভিন্ন থানায় ছবি পাঠিয়েছে পুলিশ। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় মিত কুমার মাকোয়ান জানিয়েছেন, "ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছেছে। দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে যুবতীর বয়স ২০-২২ বছর। তবে প্রাথমিকভাবে দেহ শনাক্ত করা যায়নি। নাম ও পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।" স্থানীয় বাসিন্দা বন্দনা দাস জানিয়েছেন, "একটা মেয়ে পড়ে আছে। থানাতে ফোন করা হল। মুখ পোড়া। জামা পুড়ে গায়ের সঙ্গে লেগে গিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, মেরে এখানে নিয়ে এসে পুড়িয়ে দিয়েছে। সকাল ৬টা-সাড়ে ৬টা নাগাদ এসেছি আমরা। রাতে কোনও আওয়াজ পায়নি।"
এদিকে লক্ষ্মীপুজোর দিন আরও একটি ঘটনায় উত্তপ্ত পুরুলিয়াও। পুরুলিয়ার বারাবাজার থানার সিন্ধ্রি এলাকায় এক অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নদীর চরে মৃতদেহটি পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে ঘাটের পাশে রক্তের দাগ পড়ে থাকতে যায়। তার কিছু দূরে নদীর বালি দিয়ে উুঁচু করে ঢাকা দেওয়া অবস্থায় মৃতদেহটি দেখা যায়। মৃতার পরণে জিনসের প্যান্ট ও জামা ছিল। গলায় ওড়না জড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হয় দেহটি। মৃতার পরিচয়ও জানা যায়নি। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
গত ৯ অগাস্ট আরজি কর কাণ্ডের ঘটনায় উত্তাল হয় কলকাতা। এক কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ ওঠে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। এই ঘটনার পর একের পর এক অভিযোগ ওঠে সরকারি হাসপাতালে। হাই কোর্টের নির্দেশের পর ঘটনার তদন্তভার নেয় সিবিআই। আর্থিক অনিয়মের জেরে গ্রেফতার করা হয় আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। দুর্নীতির জন্য অনেকেই গ্রেফতার হলেও খুন ও ধর্ষণ কাণ্ডে নতুন করে কারও নাম পায়নি সিবিআই। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা, রাজ্যে সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১৪ অগাস্ট কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় রাতদখল হয়। স্বাস্থ্যভবন অভিযান, মহামিছিল, মহাসমাবেশের পর, পুজোর আগে থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক অনশনরত চিকিৎসক। তবু মনোবল ভাঙেনি তাঁদের। অনশনে যোগ দিচ্ছেন অন্য ডাক্তাররাও। মুখ্যসচিবের সঙ্গে দু দফায় বৈঠক হলেও জট কাটেনি।
উৎসবের মরশুমের আগে নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জয়নগর। জলাভূমি থেকে এক ৯ বছরের শিশুর দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, তাকে ধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলে স্থানীয় বাসিন্দারা। মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে শিশু নিখোঁজের অভিযোগ জানাতে যায় স্থানীয়রা। কিন্তু তাদের অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরের দিন নাবালিকার দেহ উদ্ধার হওয়ার পরই মহিষমারি পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিতা জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব়্যাফ নামিয়ে দেওয়া হয়। লাঠিচার্জও করা হয়। ঘটনা সামাল দিতে জয়নগরে যায় এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার। প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি আকাশ মাঘারিয়া-সহ একাধিক পুলিশকর্তা। গ্রেফতার হয় এক অভিযুক্ত। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ভোররাতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।