হাসপাতালে গিয়েও নিস্তার নেই। এবার ভোররাতের আগুনে জ্বলল কলকাতায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের ইএসআই হাসপাতাল। শুক্রবার সকালে কার্যত আমরির ছায়া ফিরল শিয়ালদহের এই হাসপাতালে। এই ঘটনায় এক রোগীর দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেই দাবি সপাট উড়িয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার। তিনি জানিয়েছেন, ধোঁয়ায় অনেকেই অসুস্থ। কিন্তু মৃত্যুর কোনও খবর নেই। বাইরে যা দাবি করা হচ্ছে তা ভুয়ো।
পরিসংখ্যানে দাবি করা হচ্ছে, গত কয়েকদিন মিলিয়ে এই নিয়ে শহরে ১০ নম্বর অগ্নিকাণ্ড। শপিং মল, রাসায়নিক কারখানার পর এবং কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতাল। বুধবারই বেলেঘাটায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন নেভাতে গিয়ে বেশ লড়াই করতে হয়েছিল দমকলকে। এদিন সকালে খবর পেয়ে হাসপাতালে যায় ১০টি ইঞ্জিন।
দমকল জানিয়েছে, এদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ শিয়ালদহের ইএসআই হাসপাতালের একটি অংশ থেকে আগুন দেখতে পাওয়া যায়। কালো ধোঁয়াশ ভরতে শুরু করে হাসপাতালের চত্বর। আতঙ্ক শুরু হয় ভিতরে থাকা ৮০ জন রোগীর মধ্যে। তড়িঘড়ি করে তাঁদের উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে দমকল এসে যাওয়ায় বিপদ এড়ানো গিয়েছে।
ঘটনাস্থলে যান রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি জানিয়েছেন, খুব দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসা সম্ভব হয়েছে। তবে হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের বেশ ক্ষতি হয়েছে বলেই দাবি করা হয়েছে। কী ভাবে আগুন, তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।
এরপর গুরুতরদের শিয়ালদহ থেকে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সকালে দেখা গিয়েছে হাসপাতালের বাইরে গাছের তলায় ঠাঁই হয়েছে রোগীদের। তাঁদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বরাত জোরেই রক্ষে পেয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বিদ্যুতের তার থেকেই আগুন লাগে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আরও দুটি জায়গায়।
এই ঘটনার জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ড। জ্বলে গিয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি। আপাতত খোলা আকাশের নীচে রোগীদের চিকিৎসা করছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছেন।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকুরিয়ার তৎকালীন আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছিল এই শহরকে। ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন কমপক্ষে ১০০ জন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কমিশন তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। তারপরেও অবশ্য শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে আগুনের গ্রাস থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
এই বছরই রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। একবার নয় দুবার আগুনের গ্রাসে পড়ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে মেডিকাতেও। শুক্রবারের ভোরের আগুন এবার ছুঁয়ে গেল কলকাতার কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালকেও।