শান্তিপূর্ণ অধিকার সবার। এই একটা কথা বদলে দিল গোটা পরিবেশকে। সকাল থেকে চাপা টেনশন কাটল। ত্রয়োদশীর বিকেলে কয়েকশো ঢাকের বোলে উৎসব ফিরল রানি রাসমণি রোডে। খুলে গেল সব লৌহকপাট। আছড়ে পড়ল জনস্রোত। কলকাতা হাই কোর্টের অনুমতিতে দ্রোহের কার্নিভাল দেখল তিলোত্তমা। দেবীপক্ষে আরও একবার আদালতে গিয়ে মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের।
রেড রোডের উৎসবের কার্নিভালকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করেই মঙ্গলবার রাজপথে তাঁদের কার্নিভালের কথা জানান আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদীরা। তাঁদের তরফে জানানো হয়েছিল, গত ১১ অক্টোবর এই কার্নিভালের কথা চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল লালবাজারকে। কিন্তু সোমবার বিকেলের পর থেকেই বদলে গিয়েছিল পরিস্থিতি।
মঙ্গলবার সকালে তা আরও জটিল হয়েছিল। রানি রাসমণি রোড-সহ একাধিক জায়গায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী ১৬৩ জারি করেছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা হাই কোর্টের সাম্প্রতিক একটি নির্দেশকে হাতিয়ার করে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছিল, প্রতিবাদীদের এই কার্নিভালকে অনুমোদন দেওয়া যাচ্ছে না।
কলকাতা পুলিশেরর এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার সকালেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জরুরি শুনানির জন্য ইমেল করে সিনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে দুপুর দুটোর সময় বিচারপতি রবি কিষাণ কাপুরের এজলাসে শুরু হল দ্রোহ মামলা।
কী হল এদিনের শুনানিতে ?
মামলার শুরুতে রাজ্যের সওয়াল ছিল, যথাযথ কারণেই জন্য ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। অন্য কোনও দিন কর্মসূচি করা হোক। রাজ্যের আইনজীবী জানান, অন্য দিন যাতে এই দ্রোহের কার্নিভাল করা হয়। তিনি আরও জানান, রামলীলা ময়দানে এই কর্মসূচি করা যেতে পারে।
পাল্টা আদালতের প্রশ্ন ছিল ? আর কোথাও ১৬৩ ধারা জারি করা বাকি ? দু’টি কর্মসূচিই একসঙ্গে করতে হলে কী শর্ত দিতে চায় রাজ্য ? আদালতের এই প্রশ্নের সামনে আইনজীবীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের দাবি ছিল, ডাক্তারেরা গুন্ডা নন। তিনি নিশ্চিত করে বলছেন এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে।
রাজ্য ও ডাক্তারদের তরফে সওয়াল-জবাব শেষে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, দ্রোহের কার্নিভাল হবে। বিচারপতি রবি কিষাণ কাপুর জানান, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। আদালত বার বার এই নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরেই ধর্মতলা চত্বর থেকে সরল সাত ফুটের ব্যারিকেড।
আদালতের নির্দেশে নজির ভেঙে এক অন্য উৎসবের ছবির সাক্ষী রইল কলকাতা। ত্রয়োদশীর দ্রোহের কার্নিভালে শতাধিক ঢাকের বোলে ফিরল উৎসবের আবহ। প্রতিবাদের এক অন্য ছবি নিয়ে এগিয়ে চলার শপথ নিল তিলোত্তমা।