যাদবপুরে পড়ুয়া মৃত্যুকে (JU Student Death ) কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্য । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) ব়্যাগিং নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে সর্বত্র । মুখ খুলছেন প্রাক্তনরাও । সম্প্রতি, এমনই প্রাক্তনের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে । কী আছে সেই পোস্টে ? যাদবপুরের অমানবিক ব়্যাগিংয়ের কথা, যা নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন, নিজেই সেই ব়্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন । ব়্যাগিং এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, সিনিয়ররা তাকে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে বলেছিলেন । ঝাঁপও দিয়েছিলেন । জানাচ্ছেন, আজ তিনিও হয়তো ওই পড়ুয়ার মতো বেঁচে থাকতেন না ।
নবকুমার হালদারের পোস্টটি পড়লে বোঝা যাবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব়্যাগিং কতটা ভয়ংকর যে একটা মানুষের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে । তিনি জানাচ্ছেন, ১৯৯৮ সালে বাবা-মা-কে ছেড়ে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাদবপুরে পড়তে এসেছিলেন । ইঞ্জিয়ানিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন । হস্টেলেই থাকতেন । ব়্যাগিং মানে কি জানা ছিল না । ধীরে ধীরে তিনিও সেই 'অমানবিকতা'-র শিকার হতে শুরু করেন । তিনি লিখছেন, বুঝতে পারতেন না তাঁর অন্যায়টা কী ? 'আপনি'বলে সম্বোধন করলেও মারধর করা হত । সেইসঙ্গে গালিগালাজ । মা-বাবা পরিবারের নামেও অকথ্য ভাষা ব্যবহার । আর গার্লফ্রেন্ড থাকলে, তার শরীরের বর্ণনাও দিতে হত । সেইসঙ্গে শারীরিক অত্যাচার কীভাবে করা হত, তা কল্পনারও অতীত বলে জানাচ্ছেন তিনি ।
নবকুমার হালদার সেই শারীরিক অত্যাচারেরও বর্ণনা দিলেন, লিখলেন, 'আমাকে ফিজিক্যালি এমন কিছু নোংরা করতে বলা হয়েছিল, আমি করতে পারিনি । জ্বলন্ত বাল্বে কিস করতে বাধ্য করেছিল । সেই দিনটার কথা ভাবলে আঁতকে উঠি । আমার ঠোঁট ফুলে কলাগাছ হয়ে গিয়েছিল । খেতে পারছিলাম না । '
সিনিয়রদের কথা না শোনার খেসারৎ আরও দিতে হয়েছিল তাঁকে । তিনি লেখেন, ' হঠাৎ দু'জন দাদা বললে, “অনেক রেস্ট করেছিস, কাল রাতে তুই আমাদের কথা শুনিসনি, হিসেবটা করার আছে, চল আমাদের সাথে।” আমি যে না করবো সেরকম মেন্টাল বা ফিজিক্যাল স্ট্রেন্থ আমার ছিলো না । চললাম ওদের সাথে। আমাকে ওরা নিয়ে গেলো ছাদে। আমাকে একদম ছাদের কিনারে নিয়ে এসে বলে, ওখান থেকে ঝাঁপ দিতে। কাল রাতের শাস্তি। আগেরদিন রাতে এতটাই অত্যাচার করা হয়েছিল আমার আর বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে ছিল না। আমার চোখ বেঁধে কার্নিশের উপরে তুলে দেওয়া হয় আর আমি, জীবনের সব আশা ছেড়ে ঝাঁপ মারি। কীরকম পরিস্থিতি হলে মানুষ এটা করতে পারে, সেটা বোধহয় আমার আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই । আসলে সেদিন ওরা আমাকে চোখ বেঁধে ওয়াটার ট্যাঙ্কের কার্নিশে তুলে দিয়ে ঝাঁপ দিতে বলেছিল, আমি কিন্তু জানতাম যে আমি ছাঁদ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছি । মৃত্যুকে মেনে নিয়েই আমি সেদিন ঝাঁপ দিয়েছিলাম। একমুহূর্তেও ভাবিনি আমি বেঁচে থাকব ।'
নবকুমার প্রশ্ন তুলেছেন, যাদবপুরের ম্যানেজমেন্ট কমিটি, অধ্যাপকদের কি কোনও দায়িত্ব নেই ? সরকার, প্রশাসন কি ঘুমিয়ে রয়েছে ? কুম্ভকর্ণের ঘুম কবে ভাঙবে ? এ প্রশ্ন শুধু তাঁর নয়, সকলের ।