উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোগুলো এক একটা যেন ইতিহাসের আঁতুড় ঘর। গলিতে গলিতে বাড়ির পুজো। আর বাড়ির পুজো মানেই, তার সঙ্গে জুড়ে থাকা কত ইতিহাস। উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো বললেই যে ক'টি নাম মনে আসে, পাথুরিয়াঘাটার খেলাৎ ঘোষের পুজো তার মধ্যে অন্যতম। অনেকে চেনেন পাথুরিয়াঘাটার রাজবাড়ির পুজো হিসেবে।
পাথুরিয়াঘাটায় প্রাসাদোপম বাড়িটাই খেলাৎ ঘোষের বাড়ি। বিশাল সিংহ দুয়ার পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ঠাকুর দালান ঘিরে চারপাশে রাজবাড়ি। প্রতি থাম লাগোয়া শ্বেত পাথরের মূর্তিই বলে দেয়, এ বাড়ির সোনালি অধ্যায়ের কথা।
আড়াইশ বছর আগে সেই সিংহ দুয়ার পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস, ঘোষবাড়ির পুজো দেখতে। ঘোষবাড়ির পুজোর প্রতিষ্ঠাতা হেস্টিংস-এর অধীনে কাজ করতেন, হেস্টিংস-এর স্ত্রীকে বাংলাও শেখাতেন।
কালীপ্রসন্ন সিংহ-এর 'হুতোম প্যাঁচার নকশা'য় বাবু খেলাৎ চন্দ্র ঘোষের বৈভবের কথার উল্লেখ ছিল। তাঁকে নিয়ে রয়েছে নানা মিথ। কেউ কেউ বলতেন খেলাত ঘোষের ইংরেজি অক্ষর জ্ঞানও ছিল না, তবু কায়দা করে ইংরেজি কাগজ হাতে ধরা চায়ই। অনেকেই নাকি প্রায়ই দেখতেন হাতে উলটো করে ধরা খবরের কাগজ।
পুজোর ক'দিন এখানে ভয়ানক ব্যস্ততা, বিদেশ বিভুঁই থেকেও সদস্যরা বাড়ি ফেরেন পুজোর ক'টা দিন। দুর্গার ভাসানে আজও পারিবারিক রীতি মেনে হয় কনকাঞ্জলি। রামকৃষ্ণ দেব থেকে মহাত্মা গান্ধী, এককালে সকলের পায়ের ধুলোই পড়েছে এই বাড়িতে। পুজোর ক'দিন সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই বাড়ি। পুজো তো দেখা হয়ই, সেই সঙ্গে ছুঁয়ে দেখা যায় ইতিহাস।