কলকাতা বললেই যেমন, চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রিজের মতো কিছু কিছু ছবি, তেমনই কলকাতার দুর্গা পুজো বললে প্রথমেই মনে আসে বাগবাজার সর্বজনীন (-Bagbazar Sarbojonin)এর কথা।
কেবল তো জাঁকজমক নয়, এই পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে কলকাতার ঐতিহ্য, বনেদিয়ানা, ইতিহাস। পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম।
১৯১৯ সালে বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো শুরু হয়েছিল স্থানীয় নেবুবাগান লেন এবং বাগবাজার স্ট্রিটের মোড়ে ৫৫ নম্বর বাগবাজার স্ট্রিটে। তখন এই পুজোর নাম ছিল নেবুবাগান বারোয়ারি দুর্গাপুজো৷ পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে সুভাষ চন্দ্রের নাম। সালটা ১৯২৫। জেলে বসে সুভাষ চিঠি লিখলেন বন্ধুকে, জানালেন, জেলেই পুজোর অনুমতি মিলেছে। পুজোকে ঘিরেই শুরু হলো লাঠি খেলা, যা আদতে বিপ্লবীদের অনুশীলনের অংশ ছিল। সেই প্রথা মেনেই বাগবাজারে আজও পালিত হয় বীরাষ্টমী।
১৯৩০ সাল। কলকাতার মেয়র তখন সুভাষচন্দ্র বসু। কলকাতা পুরসভার অল্ডারম্যান দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টায় বাগবাজার সার্বজনীনের পুজো বর্তমান চেহারা পায়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সহ আরও অনেকে যুক্ত ছিলেন এই পুজোর সঙ্গে। পুজোয় প্রথমবারই ৫০০ টাকা চাঁদা দিলেন নেতাজি, পুজোর নাম বদলে হলো 'বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও মেলা'।
শহরের অধিকাংশ থিম পুজোয় মহালয়ার আগে থেকেই মণ্ডপ তৈরি। বাগবাজারে কিন্তু অন্য ছবি। এক কথায় বলা যায়, পুজোর আগেই পুজোর মেজাজ আসেনা সেখানে। বরং, এই যে মা আসার প্রস্তুতি, তাই চেটে পুটে মেখে নেয় বাগবাজারবাসী।
ডাকের সাজের সাবেকি দুর্গার মাথায় থাকে দশ ফুট উচ্চতার মুকুট। কৃষ্ণনগর থেকে আসে তা। মাঝের পাড়া বাগচী লেন থেকে সে মুকুট রওনা দিয়েছে কলকাতার দিকে।
থিম পুজোর ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই? শুনেই হেসে উড়িয়ে দেন পুজোর উদ্যোক্তারা। বলেন, সাবেকিয়ানাই এই পুজোর থিম। এই প্রজন্মও নাকি বাগবাজার সর্বজনীনকে ঠিক এ ভাবেই পেতে চায়।