রাজস্থান বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধূ ধূ মরু প্রান্তর, উট আর বড় বড় কেল্লা, রাজপ্রাসাদ । একইসঙ্গে রাজস্থানের লোকসংস্কৃতি... বিভিন্ন রাজস্থানী নৃত্য, গানও মরু রাজ্যের বিশেষত্ব । আর স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও ইতিহাসের রাজ্য রাজস্থান । কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৮১০ কিলোমিটার । ট্রেনে গেলে গোটা একদিন লেগে যায় । তবে, এবার রাজস্থান কিন্তু ঘরের একেবারে কাছেই । মরু রাজ্যে যেতে গেলে কিন্তু একদিন ট্রেনে কাটাতে হবে না । ভাবছেন কীভাবে ? দমদমের বেদিয়াপাড়া গেলেই সব উত্তর মিলবে । আসলে, এবারের দুর্গাপুজোয় দক্ষিণ বেদিয়াপাড়া দুর্গোৎসব কমিটির থিমই হল রাজস্থানের ঘুমোরের ঘটা । এবার ৩৫ বছরে পা দিল বেদিয়াপাড়ার পুজো ।
মণ্ডপে ঢুকলেই মনে হবে কলকাতার বুকে যেন একটুকরো রাজস্থান । মরু রাজ্যের সব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে মণ্ডপসজ্জায় । রাজস্থানের কেল্লা, রাজপ্রাসাদের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ । একইসঙ্গে রাজস্থানের গ্রামীণ জীবনযাত্রার ছবিও তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপসজ্জায় । তবে, এবার বেদিয়াপাড়ার থিমের প্রধান আকর্ষণ ঘুমর । রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী একটি লোকনৃত্য ঘুমর । রাজপুত রাজাদের রাজত্বকালে রাজস্থানে এই নাচ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাজস্থানি পোশাকে মহিলারা ঘুমর নাচে অংশগ্রহণ করেন । মণ্ডপে সেই থবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ।
রাজপ্রাসাদের আদলে মণ্ডপের ভিতরে ঢুকলেই দেখা যাবে এক বড় দালান । সেখানে 'ঘুমর' নৃত্যরত মহিলাদের প্রতিকৃতি গড়ে তোলা রয়েছে । সঙ্গে রয়েছেন বাদ্যকারেরা । ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে পদ্মাবৎ সিনেমার 'ঘুমর' গান । দক্ষিণ বেদিয়াপাড়া দুর্গোৎসব কমিটির পুজো মণ্ডপে গেলে মনে হবে রাজস্থানেই যেন এসে পড়েছেন ।
থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দেবী দুর্গাকে সাজানো হয়েছে । দেবীর পরনে শাড়ি নয়, রাজস্থানের ঘাগড়া । শুধু পোশাক নয়, গয়না, সাজসজ্জাতেও রাজস্থানের ছোঁয়া । দেবী দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশও হয়ে উঠেছে রাজস্থানি । দুর্গা প্রতিমায় রয়েছে অভিনবত্ব । থিমের ভিড়ে সেখানেই স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে বেদিয়াপাড়ার পুজো । চতুর্থীর রাত থেকেই দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন বেদিয়াপাড়া পুজো মণ্ডপে । বাঙালিদের প্রিয় থিম পুজোর তালিকায় বেদিয়াপাড়া প্রত্যেকবারের মতো এবারও জায়গা করে নেবে বলেই আশা উদ্যোক্তাদের ।